জাতীয়

ছিলেন শিক্ষক, এখন কেউ রাখাল কেউ হোমিও চিকিৎসক


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন। তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তা। এমন পরিস্থিতিতে পেশা বদল করছেন তারা। জীবিকার তাগিদে কেউ প্রাইভেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি নিয়েছেন, কেউবা ব্যবসা করছেন আবার কেউ দিনমজুরি করছেন। 

এমনই একজন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আল হেরা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক। একসময় যার হাতে থাকতো চক-ডাস্টার, ব্যস্ত সময় কাটাতেন মানুষ গড়ার কাজে, আজ তিনিই করেন রাখালের কাজ।

ত্রিশাল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল কালামের খামারে গেলে দেখা মিলবে শিক্ষক আজিজুল হকের। করোনা পরিস্থিতিতে পাল্টে গেছে তার এতদিনকার জীবন।

আজিজুল হক জানান, স্কুল বন্ধ, কবে খুলবে তার কোন ঠিক নেই। বেসরকারি স্কুল হওয়ায় ছাত্রদের বেতনের উপরই নির্ভর করতেন। তাই বিপাকে পড়েছেন তিনি। প্রথমে হাজার টাকা বেতনে ত্রিশাল বাজারে একটি দোকানে কিছুদিন কাজ করেন। পরে তিন মাস হলো, আট হাজার টাকা বেতনে খামারে কাজ শুরু করেছেন।

খামারের মালিক আব্দুল কালাম জানান, শিক্ষক আজিজুল হককে আমরা সবাই চিনি। ছাত্র পড়ানোর ক্ষেত্রে তার সুনাম আছে। অভাবে পড়ে আমার কাছে এসেছে চাকরির জন্য। আমি প্রথমে রাজি হইনি। তারপর তার অনুরোধে চলমান অবস্থা দেখে চাকরি দিয়েছি। আমি নিজেও ভাবছি, তার জন্য অন্য কোন কিছু করা যায় কিনা।

ত্রিশালের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ মোস্তাহিদা পারভিন বলেন, বেসরকারি স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনগুলো আমরা দেখাশোনা করে থাকি। আল হেরা একাডেমী আমার দায়িত্বরত এলাকার মধ্যেই পড়ে। যারা কিন্ডারগার্টেনে পড়ান, তাদের চাকরি যেহেতু সরকারী নয় তাই বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। শিক্ষক আজিজুল হককে আমি চিনি। তার সমস্যার বিষয়ে কতটুকু কী করা যায় আমি চেষ্টা করবো।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজারাকাটি এলাকায় অবস্থিত আব্দুর রহমান আদর্শ একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, স্কুলটিতে ৯ জন শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩ জন ছাত্রছাত্রীর যাতায়াতে জাকজমকপূর্ণ পরিবেশ ছিল স্কুলটিতে। তবে করোনার কারণে দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। আমি এখন হোমিও চিকিৎসার দোকান দিয়েছি। অন্যরাও পেশা বদল করে ফেলেছেন। কেউ কেউ প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাইনি। মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা। ছাত্রছাত্রীদের বেতনের টাকায় সম্মানি পেতেন শিক্ষকরা।

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক পারভেজ হোসেন জানান, আমি এখন ধানের বিচালির ব্যবসা করছি। এছাড়া রয়েল কিং ব্ল্যাক টি কোম্পানির তালা উপজেলা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে কিনা অনিশ্চিত। সংসারের অবস্থা খুবই খারাপ। মা-বাবা অসুস্থ। কষ্ট হলেও সংসার তো পরিচালনা করতে হবে। 

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব স্কুল ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলে। আমরা শুধুমাত্র বই দিয়ে থাকি। এছাড়া সেখানে আমাদের কাজ নেই।

কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার গত বছরের ১৭ মার্চ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্যানুসারে, ক্রমবর্ধমান কোভিড মহামারির কারণে একের পর এক স্কুল বন্ধ হতে থাকায় মাসের পর মাস বেতন পাননি বেসরকারি শিক্ষকরা। ফলে দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষক পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। 

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি-জেনারেল মিজানুর রহমান সরকার বলেন, অভিভাবকদের ফোন দেওয়া হলেও তারা অ্যাসাইনমেন্ট শিট সংগ্রহ করতে রাজি হননি। অভিভাবকরা বলেছেন, স্কুল খোলার পরে তাদের সন্তানরা স্কুলে যাবে। 

তিনি বলেন, অভিভাবকদের টিউশন ফি দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। 

বেসরকারি স্কুল ও কলেজ সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, সিংহভাগ বেসরকারি স্কুলই চলছে ভাড়া নেওয়া ভবনে। বেশিরভাগ স্কুল মালিকই ইতোমধ্যে ভাড়ার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছেন। স্কুল নিয়ে তারা আর ভাবছেন না।

এর ফলে বিপদে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষা খাত। এতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে