বিনোদন

ট্রেন ভর্তি লাশ, একাত্তরের সত্য ঘটনা টেলিফিল্মে


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

একটি টেলিফিল্ম বানানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা অবলম্বনে সেই টেলিফিল্মের জন্য দরকার ট্রেন, শুধু ট্রেনে হলে হবে না প্রয়োজন রেলের শহর। 

মুক্তিযুদ্ধের খুবই রোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটক শ্বাপদ। আর এই টেলিফিল্মকে বাস্তবে চিত্রিত করার জন্য শুটিংএর ঢাকা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের রেলের শহর পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরকে বেছে নেওয়া হয়। টানা তিনদিন সেখানে শুটিং করা হয়। চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুম আর পরিচালনা করেছেন শাহরীয়ার। টেলিফিল্মটি প্রযোজনা করেছেন পিকলু চৌধুরী।

kalerkantho

এতে অভিনয় করেছেন শবনম ফারিয়া, এফ এস নাইম, তারিক আনাম খান,শম্পা রেজা,শতাব্দি ওয়াদুদ, আবুল কালাম আজাদ সেতু, রওনক রিপন ছাড়াও আর অনেকে। 

শ্বাপদের গল্পটা এমন, পাকিস্তান রেলওয়ে। ১৯৭১। ওয়াজিউল্লাহ চৌধূরী তখন পাকিস্তান রেলওয়তে বিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত।  স্ত্রী দুই ছেলে ২ মেয়ে এবং মাকে নিয়ে ওয়াজিউল্লার পরিবার। বড় ছেলে আবুল কাসেমের বয়স তখন ২১। মুক্তির দলে যোগ দেবার জন্যে ছেলে ছটফট করে। ওয়াজিউল্লাহ করা শাসন করেন। রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পাকিস্তানের সরকারি চাকুরে। ওয়াজিউল্লাহ তখনো  চাকরি করে যাচ্ছেন। যদি কোনও ভাবে জানতে পারে ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, তাহলে সবার জীবন বিপণ্ণ। 

kalerkantho

বদর বাহিনীর এক ছেলে এক পাক আর্মি নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়। ওয়াজিউল্লার স্ত্রী ছেলেমেয়েরা ভয় পায়। তাকে নিয়ে যায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের কাছে। ক্যাপ্টেন লতিফ তাকে হুকুম করেন, ‘ট্রেনে একটা খালি বগি জুড়তে হবে। কুমিল্লার বাইরে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রেন থামাতে হবে। সেই বগিতে কিছু মাল তোলা হবে। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সেই মাল রাতের মধ্যেই ডেলিভারি দিতে হবে। যুদ্ধকালীন একটা অপারেশন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এটিকে। এবং কেউ যেন জানতে না পারে। মাল লোড আনলোড করতে তোমার স্টাফদেরও সহযোগীতা লাগবে।

ক্যাপ্টেনের আদেশ অমান্য করবার উপায় নেই। ওয়াজিউল্লাহ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে স্টেশনে যায়। দুজন স্টাফকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে।  গাড়িতে কি মাল ওঠানো হবে ওয়াজিউল্লাহ তখনো জানে না। গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় থামে। গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পায় কয়েকজন  পাক আর্মির সঙ্গে দুজন বাঙালি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পাশে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা একটা স্তুপ। ত্রিপল সড়াতেই ওয়াজিউল্লাহ চমকে ওঠে। 

kalerkantho

কয়েকশো মানুষের লাশ। একজন আর্মি সদস্য টর্চ জ্বেলে দ্যাখায়। গাড়িতে মাল লোড করার আদেশ দেয়। লাশগুলো খালি বগিতে তোলা হয়। এক ফাঁকে একজন বাঙালির কাছে ওয়াজিউল্লাহ জানতে চায়, লাশগুলো কোথাকার? কেন ট্রেনে তোলা হচ্ছে।  বাঙালি লোকটা বলে, বেশি জানতে চেয়ো না। তারপর বলে, এতো লাশ একসাথে গুম করার উপায় নাই। লাশগুলো জায়গামতো পৌঁছে  দাও। ওখানে লোক আছে। ভোরের আগেই খালাশ করতে হবে। তোমার দায়িত্ব শেষ।’ লাশ তোলার একপর্যায়ে ওয়াজিউল্লাহ খেয়াল করে  একটা লাশ যেন একটু নড়ে উঠলো। 

ওয়াজিউল্লাহ কিছু বলতে গিয়েও বলে না। লাশ তোলার পর ওয়াজিউল্লাহ গাড়ি নিয়ে রওনা হয়। ওয়াজিউল্লার মনের মধ্যে খচখচ করে, লাশগুলোর মধ্যে কেউ হয়তো অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে বেঁচে আছে এখনো। ওয়াজিউল্লাহ একটা হ্যাজাক বাতি নিয়ে চলন্ত ট্রেনে লাশের বগিতে ঢোকে। খুঁজতে থাকে জীবিত কাউকে। একজন দুজন না, প্রায় সতেরোটা শরীরে প্রাণের স্পন্দন পায় ওয়াজিউল্লাহ। কি করবে বুঝতে পারে না সে। চারটার মধ্যে তাকে পৌঁছাতে হবে। ওখানেও নিশ্চই অপেক্ষা করছে কিছু শ্বাপদ।

প্রযোজক পিকলু চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঘটনা এতোই নৃশংস যে সেব গল্প শুনলে বুক কেঁপে ওঠে। পাক বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছে এদেশের মানুষ, এই গল্প তারই প্রতিছবি। সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় এই গল্প আমরা শুনেছি ঘটনার সাক্ষি ওয়াজিউল্লার মেয়ে লুৎফুন্নেসা এবং নাতি রাশেদুল আউয়ালের কাছে।’

পিকলু বলেন, ‘আমরা এই টেলিফিল্মটি বানানোর জন্য একটি ট্রেন ভাড়া করেছি তিনদিনের জন্য। শুধু তাই নয়। স্থানীয়ভাবে সহায়তা পেয়েছি বলে একটি সুন্দর প্রযোজনা সম্পন্ন করতে পেরেছি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর টেলিফিল্মটি প্রচারিত হবে একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে।