জাতীয়

ডিসেম্বরে ৪০২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৪


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০২টি। নিহত ৪৬৪ জন এবং আহত ৫১৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৬, শিশু ৫১। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩৮ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৭ জন, যা মোট নিহতের ৩১.৬৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪.৩২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৮ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৭.৫৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৪ জন, অর্থাৎ ৯.৪৮ শতাংশ।

এই সময়ে ৫টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে। ১২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯ জন, আহত ৪ জন।

রোববার (৩ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় বাস যাত্রী ১৮, ট্রাক যাত্রী ১৩, পিকআপ যাত্রী ১১, লরি যাত্রী ৭, ট্রাক্টর যাত্রী ৫, মাইক্রোবাস যাত্রী ৯, প্রাইভেটকার যাত্রী ৭, সিএনজি যাত্রী ১২, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৬০, নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-বোরাক-টেম্পু যাত্রী ২৭, টমটম-ভ্যান ৬, বাই-সাইকেল আরোহী ৫, রিকশা-রিকশাভ্যান যাত্রী ৯ জন নিহত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ১ জন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ১ জন, পুলিশ সদস্য ৫ জন, সেনা সদস্য ২ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৩ জন, পল্লী চিকিৎসক ৩ জন, ডাক পিওন ১ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ১ জন, মানসিক প্রতিবন্ধি ৪ জন, স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক ৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮ জন, পোশাক শ্রমিক ৯ জন, ইটভাঙ্গা শ্রমিক ৩ জন, ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিক ২ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৪২ জন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৮ জন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৪ টি (৩০.৮৪%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৯ টি (৩২.০৮%) আঞ্চলিক সড়কে, ১০৪ টি (২৫.৮৭%) গ্রামীণ সড়কে, ৪২ টি (১০.৪৪%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে (ফেরিঘাট, নদীর তীর) ৩ টি (০.৭৪%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাসমূহের ৭৭ টি (১৯.১৫%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪৭ টি (৩৬.৫৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৩১ টি (৩২.৫৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৮ টি (৯.৪৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৯ টি (২.২৩%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.৪৯ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৪.২৯ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ২.৬৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১০.৮০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ১৯.৫২ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা) ২৮.২৫ শতাংশ, নসিমন-করিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-বোরাক ৯.৪১ শতাংশ, রিকশা-রিকশাভ্যান, বাই-সাইকেল ২.৪৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (তেলবাহী ট্যাঙ্কার, দুধবাহী ট্যাঙ্কার, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী লরি, পুলিশের পিকআপ, আনসার ব্যাটালিয়নের পিকআপ, হ্যান্ড ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক, ডাম্পার এবং টমটম) ২.০৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭২২টি। (ট্রাক ১০৮, বাস ৭৮, কাভার্ডভ্যান ১৩, পিকআপ ২৭, লরি ৬, ট্রলি ৯, ট্রাক্টর ১৬, মাইক্রোবাস ১১, প্রাইভেটকার ৮, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ১, দুধবাহী ট্যাঙ্কার ১, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী লরি ১, পুলিশের পিকআপ ১, আনসার ব্যাটালিয়নের পিকআপ ১, হ্যান্ড ট্রাক্টর ২, ড্রাম ট্রাক ৪, ডাম্পার ২, টমটম ২, মোটরসাইকেল ১৪১,নসিমন-করিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-বোরাক ৬৮, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা ২০৪, বাই-সাইকেল ৫, প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১৩টি।

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৪৭%, সকালে ৩৩.০৮%, দুপুরে ১৫.৯২%, বিকালে ২০.৩৯%, সন্ধ্যায় ৬.৯৬% এবং রাতে ১৯.১৫%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৭ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৮ জন। সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগে। ২০ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ জন। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত। সবচেয়ে কম পিরোজপুর জেলায়। ২ টি দুর্ঘটনায় ১জন নিহত।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:

১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;

২. বেপরোয়া গতি;

৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;

৪. বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা;

৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;

৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;

৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;

৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;

৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি;১০ গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ:

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;

২. চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;

৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;

৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;

৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে;

৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;

৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;

৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে;

৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।১০.“সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবেদনে মন্তব্যে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা সামান্য কমলেও প্রাণহানির হার বেড়েছে। নভেম্বর মাসে ৪১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে ডিসেম্বর মাসে দুর্ঘটনা কমেছে ৩.৫৯%, কিন্তু প্রাণহানি বেড়েছে ৫.৬৯%। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩৪২ জন, অর্থাৎ ৭৩.৭০%। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার ক্রমেই উর্ধমুখী হচ্ছে। জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার সবসময় বেশি থাকলেও গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে। মোটরসাইকেল চালক ও পথচারী নিহতের ঘটনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ। দেশের দুর্বৃত্তায়িত কলুষিত রাজনীতিতে মোটরসাইকেল সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এসব মোটরসাইকেল চালক চরম বেপরোয়া এবং এরাই বেশি দুর্ঘটনাক্রান্ত হচ্ছে। রেল ক্রসিংয়ে ৩টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশে ৮২% রেল ক্রসিং অরক্ষিত, ফলে মাঝে-মধ্যেই ট্রেনের সঙ্গে সড়ক পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব রেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই, যা দুঃখজনক। জাতীয় স্বার্থেই এক্ষেত্রে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনারোধে নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং গণপরিবহন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা- উভয়ই জরুরি। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।