প্রধান পাতা

তিন জনে মিলে ৩শ চুরি, শেষ বারে ধরা পড়ে যেভাবে


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কথায় আছে— চোরের দশদিন গৃহস্থীর একদিন। গত সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ-জামালখানসহ বাণিজ্যিক এলাকায় বেছে বেছে অফিসগুলোতে চুরি করতো সংঘবদ্ধ একটি চোরচক্র। অফিসে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা এড়াতে ডিভিআর মেশিন খুলে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখতো। এভাবে গেল সাত বছরে প্রায় ৩শ চুরি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে চক্রটি। তবে এবার ডিভিআর মেশিন ভেবে বালতি চুবিয়ে রেখেছিল ডিস কানেকশন মেশিন। ব্যস! চুরির প্রায় ২৭ লাখ টাকাসহ এতেই ধরা পড়লো পুলিশের হাতে। কিন্তু পেশায় পুরোদস্তুর চোর হলেও রমজান মাসে চুরি করতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার (২১ মে) ও শনিবার (২২ মে) দুই দফায় সংঘবদ্ধ চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় পুলিশ। 

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন— চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনী কাঁচাবাজার এলাকার মো. মনির হোসেন (৪০), চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকার মো. মাহফুজ (৩০), চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনী কাঁচাবাজার এলাকার খুকু মনি ওরফে খুকু বেগম (২৮)। এদের মধ্যে মনির ও খুকু বেগম স্বামী-স্ত্রী এবং মাহফুজ নগর চষে বেড়ানো ওই সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভার।

পুলিশ জানায়, প্রতিদিন ঘড়ির কাটা রাত সাড়ে ১১টায় পৌঁছালে একটি সিএনজি অটোরিকশা চষে বেড়ায়  জামালখান মোড়, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, আগ্রাবাদসহ চট্টগ্রাম নগরের অফিস পাড়াগুলো। টার্গেটে থাকে ব্যাংক, অফিস, স্কুলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠন। ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের জানালার গ্রিল মাত্র এক মিনিটে ভেঙে লুটে নেন নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ঘিয়ের কৌটা, দুধের প্যাকেটসহ যা হাতের কাছে পান তাই! আর বাড়িতে পৌঁছে সেই চোরাই মালামাল নিরাপদে রাখতে জমা দিতেন স্ত্রীর হাতে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের জুবলী রোড শাখার অফিসে গ্রিল কেটে চুরির চেষ্টা এবং একই বিল্ডিংয়ের বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সের ৪র্থ তলার অফিসের গ্রিল কেটে ও লকার ভেঙে চুরি হয় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। আর এ ঘটনার তদন্তে নেমে সন্ধান মেলে এ দুর্ধর্ষ চোর চক্রের। 

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার মনির হোসেন একজন পেশাদার চোর। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে তিনি চুরির পেশায় জড়িত। এর পাশাপাশি নগরের বিশ্বকলোনী শাপলা গ্যাস লাইন এলাকায় তার একটি ভাঙ্গারির দোকান আছে। চোরাই মালামাল ওই ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি হতো। তাছাড়া আন্তঃজেলা চোর আমির তার আপন বড় ভাই। অন্যদিকে এ চক্রের সদস্য মাহফুজ ছিলেন সিএনজি অটোরিক্সা চালানোর দায়িত্বে। চুরিতে ধরা পড়ে গেলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাঁচার জন্য সিএনজিতে দু’টি চাপাতি রেখেছিলেন তারা। মূলত ড্রাইভার মাহফুজ দিনে ঘুমাতেন আর রাতে বের হতেন চুরির কাজে। এই দুর্ধর্ষ চোর চক্রের সবচেয়ে সহজ কাজের দায়িত্বে ছিলেন মনিরের স্ত্রী খুকু মনি। চোরাই হওয়া মালামাল আর নগদ টাকা নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখতেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক জানান, দীর্ঘ ৭ বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি চুরির কথা স্বীকার করেছেন মনির। সম্প্রতি তার চুরির তালিকায় রয়েছে— কোতোয়ালী থানার নজীর আহমদ রোডের একটি বেসরকারি অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা চুরি, জামালখান এলাকার একটি কম্পিউটার একাডেমি থেকে ল্যাপটপ চুরি, রাজাপুকুর লাইনের ৩টি কাগজের গোডাউন থেকে ৫০ হাজার টাকা, চকবাজারের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে ৩৬ হাজার টাকা, ১টি এলইডি মনিটর, ১২ কেজি দুধের প্যাকেট, ১৩ প্যাকেট ঘি, আগ্রাবাদের একটি অফিস থেকে মূল্যবান জিনিস চুরিসহ অসংখ্য চুরির ঘটনা।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, চুরির সময় সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সব রকম কৌশল অবলম্বন করতো এ চক্রটি। গ্রিল কেটে অফিসে প্রবেশের পর সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ডিভিআর মেশিন খুলে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখতো। তবে গত ১৮ মে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সের অফিসে ডিভিআর মেশিন ভেবে ডিশ কানেকশন মেশিন পানিতে চুবিয়ে রাখে। কিন্তু ওই অফিসটির ডিভিআর মেশিন অন্য জায়গায় থাকার কারণে মনিরকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘তার বড় ভাই আমীর আন্তঃজেলা চোর। গত ফেব্রুয়ারিতে আমীর মারা গেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারই ছোট ভাই মনির একজন দুর্ধর্ষ চোর। সে চুরি করতে ঢুকলে, গুঁড়া দুধের প্যাকেট, ঘি থেকে শুরু করে নগদ টাকা, ল্যাপটপ যা পাই তাই নিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ চুরির কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা রমজান মাসে চুরি করেন না বলে জানিয়েছে আমাদের।’

সংঘবদ্ধ এই চোর চক্র পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উৎঘাটনের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় চুরির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি, নগদ ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ২টি চাপাতি ও একটি রেঞ্জ।

এদিকে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সের ও ভবন মালিক কাইজার আবুওয়াল বলেন, ‘গত ১৮ মে সন্ধ্যা ৭ টায় আমি অফিস বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। পরদিন জানতে পারি আমাদের ৩ তলায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রিল কেটে কেউ প্রবেশ করেছে। কিন্তু সেখান থেকে কিছু চুরি হয়নি। অন্যদিকে ৪ তলায় আমার অফিসে (বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স) এসে দেখি জানালার গ্রিল কাটা। লোহার সিন্দুক, কাগজ পত্র সব অগোছালো। সিন্ধুকে রাখা ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাও নেই। মাত্র ১৬ ইঞ্চি গ্রিল কেটে চোর কিভাবে ঢুকেছে— বুঝতে পারছিলাম না। পরে আমি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ধারণা সে পাইপ বেয়ে তিন তলায় উঠতে গিয়ে চার তলার ব্যাংকে ঢুকে গিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রে আর কেউ আছে কিনা সব বিস্তারিত জানা যাবে।’