বিজ্ঞাপন

নারীর স্তন ক্যান্সার যখন মনেরও যুদ্ধ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর জন্য এই ধাক্কা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও। অনেকের চিকিৎসার খরচ চালানোর সামর্থ্য থাকলেও সুস্থ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হয়।

নিজে ভুগেছেন এবং পরিবারের মানুষটিকে স্তন ক্যান্সারে ভুগতে দেখেছেন, এমন দুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন তাদের অভিজ্ঞতার আদ্যোপান্ত।

নিজেকে এই যুদ্ধে এখন জয়ী বলতে চান খন্দকার শাহানা বিলকিস। দুই বছর আগে ৩৫ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে তার।

শরীরে এই ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তা কি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন?

খন্দকার শাহানা বিলকিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৮ সালের ঘটনা। সে সময় আমার টুইন বেবি ব্রেস্ট ফিডিং করত। এর আগে আমার ছেলে ওর দুই বছর বয়স পর্যন্ত ব্রেস্ট ফিডিং করেছে। এখন ওর বয়স ১৬। জমজ মেয়ে বাচ্চা দুটো দেড় বছর এক্সট্রিম ব্রেস্টফিড করেছে।

“একসময় খেয়াল করলাম আমার ডান হাতের আর্মপিট (বগল) অস্বাভাবিকভাবে ফুলতে শুরু করলো। ব্যাপারটাকে প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। ব্রেস্ট ফিডিং বন্ধ করলে ডান স্তনে দুটি চাকার মতো হলো। মাসখানেক পরে একটা চাকা মিলিয়ে গেলেও আরেকটা চাকা রয়ে যায়। সেটা কিছুটা ডান দিকের কলারবোনের কাছাকাছি। আর ডান হাতের আর্মপিট যথারীতি ফুলেই থাকে।”

এরপরও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বেশ সময়ই লেগেছিল তার; প্রায় বছরখানেক। কিন্তু কেন?

“যেহেতু স্তন একটা গোপন অঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত এবং যেহেতু ব্যাপারটি আমাকে তেমন একটা যন্ত্রণা দিত না, অতিরিক্ত ব্যথাও ছিল না, তাই আমি ব্যাপারটি নিয়ে আর ডাক্তারের শরণাপন্ন হইনি।”

সেই সঙ্গে কাজ করেছে লজ্জা ও জড়তাও।

শাহানা বলেন, “হাজবেন্ডকে বিষয়টি জানানোর পর তিনিও ততটা গুরুত্ব দেননি।

“প্রথমে ভেবেছিলাম ভালো কোনো সার্জনের কাছে যাব। কিন্তু পরে ভাবলাম এক্ষেত্রে স্পর্শ করা লাগতে পারে বিধায় কোনো পুরুষ ডাক্তারের কাছে না যাওয়াই ভালো। এভাবেই দোনোমনা করতে গিয়ে এক বছর কেটে গিয়েছিল।”

শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে প্রথমবার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন এই নারী।

“পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢাকা মেডিকেলের একজন ডাক্তার বললেন, লক্ষণগুলো বেশি ভালো না। উনি আমাকে এফএনএসি এবং একটা আলট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিলেন।”

ক্যান্সার শনাক্তে সুই দিয়ে শরীর থেকে কোষ ও তরল নিয়ে দেখা হয় এফএনএসি বা ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি পরীক্ষায়। আর এতে ‘ইনফেকশন’ ধরা পরে শাহানার।

এরপর চিকিৎসা শুরু হলেও এই চিকিৎসা নিয়েই নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যেতে থাকেন তিনি।

প্রথমে একজন চিকিৎসক তাকে ১৫ দিন করে তিন দফায় ৪৫ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন। কিন্তু তাতেও স্তন আর বগলের চাকার কোনো পরিবর্তন আসেনি। এরপর তাকে অস্ত্রোপচার করে ডান স্তন থেকে লাম্প অপসারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সাহানা বলেন, “তখনও বায়োপসিও করানো হয়নি। আমাকে তখনও ক্যান্সারের উপস্থিতির ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি যদিও সেই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে আমি লিফলেটে পড়েছিলাম স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে; যেগুলোর বেশিরভাগই আমার মধ্যে ছিল।”

সিদ্ধান্ত নিতে তখন অন্য এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি, যিনি তার খালু। এই চিকিৎসক তাকে বিএসএমএমইউর একজন সার্জনের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং সার্জারি করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোর বায়োপসি করানোর কথা বলেন।

কিন্তু সাহানা আগের চিকিৎসককে বিষয়টি জানালে তিনি এতে গুরুত্ব না দিয়ে অস্ত্রোপচার করে ফেলেন। তারপর ধরা পড়ল যে তার স্তনে ক্যান্সার।

তিনি বলেন, “(সার্জারির পর) আর্মপিট আগের মতোই রয়ে গেল। বায়োপসি করতে দেওয়া হল। ১২ অগাস্ট বায়োপসির রিপোর্টে ধরা পড়ল আমার ক্যান্সার তৃতীয় ধাপের একদম কাছাকাছি।