চট্টগ্রাম

পটিয়া ইউপি নির্বাচন : ‘দুই ঘরের’ ঝগড়া ভোটের মাঠে


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দেশের দুই প্রভাবশালী পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলপাড় চলে আসছে। এখন সেই বিরোধ গড়াল পটিয়ার ভোটের মাঠে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে সেই বিরোধের অদৃশ্য প্রভাব পড়েছে। দুই পরিবারের বিরোধের অনলে পুড়ছে এখন দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’। ১২ ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। প্রতীক দেওয়ার আগেই দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেছেন।
আগামী ২৬ ডিসেম্বের চতুর্থ ধাপে পটিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে তিন ইউনিয়নে বিনাভোটে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন আ. লীগ দলীয় প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে এখন পর্যন্ত ভোট হবে ১৪ ইউনিয়নে। এরমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১২ ইউনিয়নে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই দলীয় পদ-পদবীধারী। স্থানীয়ভাবে দুই নেতার অনুসারী।
দলীয় সূত্র জানান, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। দুই পক্ষই নিজের লোক খ্যাত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছে। ভাগাভাগি করে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন দুই পক্ষের লোকজন। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে এক পক্ষের একক প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে। সেই পক্ষের ধারণা ছিল, ক্ষমতার দাপটে নিজেদের কাছের লোকদের নৌকা প্রতীক পাইয়ে দিয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও পাকাপোক্ত করবে। কিন্তু রণে ভঙ্গ দিল প্রতিপক্ষ। দেশের শীর্ষ এক ব্যবসায়ী পরিবারের বদান্যথায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ওই পক্ষের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়। স্থানীয় রাজনীতিতে একক প্রভাব বিস্তারকারী পক্ষের কাছের লোক খ্যাত অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পাননি। অপর পক্ষেরও একই দশা। শেষে দুই পরিবারের অনুসারী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ভোটের মাঠে।
দাখিল করা মনোনয়নপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পটিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১২ ইউনিয়নে। তাদের মধ্যে অনেকেই দলীয় পদ-পদবিধারী। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় সাংসদের অনুসারী। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য দলীয়ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে জেলা ও উপজেলা আ. লীগের সমন্বয়ে বিদ্রোহীদের ‘নিবৃত্ত’ করতে কর্মিসভা করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান বলেন, ‘সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আশা করছি, দলীয় সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবে। দলের শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। নৌকার বিজয়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন সবাই।’
কুসুমপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইব্রাহীম। মাঠে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ। তিনি স্থানীয় সাংসদ হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কোলাগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আহমদ নুর। মনোনয়ন জমা দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাসেম রাসেল। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সামশুল ইসলামের সুনাম ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নৌকা প্রার্থীর বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামশুল ইসলামকে নিয়ে। হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে আ. লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গতবারের পরাজিত দলীয় প্রার্থী ফৌজুল কবির কুমার। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হক লিটন। হাইদগাঁও ইউনিয়নে আ. লীগের প্রার্থী যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ ফয়সল। আছেন ইউনিয়ন আ. লীগের যুগ্ম আহবায়ক বিএম জসিম। জিরি ইউনিয়নে আ. লীগের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম টিপু। বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভোলা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আশিয়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাশেম। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বেলাল উদ্দিন, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল হক রাশেদ। ধলঘাট ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হলেন রনবীর ঘোষ টুটুন। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শফিউল আলম বাদশাহ। জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা ও বর্তমান মেম্বার শাহাদাত হোসেন সবুজ।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে সমঝোতার চেষ্টা করছি। অনেকেই প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’