জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান আমানতকারীরা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে টাকা ফেরত পেতে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীরা। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর সিটি সেন্টারের সামনে ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারি কাউন্সিলের ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ আলটিমেটাম দেয়া হয়।

মানববন্ধনের ক্ষোভ, আকুতি জানিয়ে পিপলস লিজিং-এর আমানতকারীর জমানো টাকা ফেরত দাবি করেন। জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে খারাপ অবস্থা এই প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখা ৬ হাজারের মতো ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীর। এরমধ্যে দুশোর বেশি লোক জড়ো হয়েছেন মানববন্ধনে। কেউ কালো পতাকা হাতে আবার কেউ প্ল্যাকার্ড হাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে অবসায়ন হওয়ারও প্রায় দু বছর হলেও এখনো টাকা না পেয়ে তারা অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা।

মানববন্ধনের আহ্বায়ক ও প্রধান সমন্বয়কারী মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সকৃত প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি। কোম্পানিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন পরিচালকের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। কিছু ব্যক্তি মাসের পর মাস এই ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে শত শত কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করলেন, অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোর খবর রাখেনি। যখনই পাচারকারীরা দেশ থেকে চলে গেছেন তখনই এই টাকার সন্ধান করা হয়। এটা থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগসাজশে টাকা পাচার হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও কীভাবে এখান থেকে টাকা পাচার হয়? ব্যাংকের অডিটের সময় কেন ধরা পড়ে না? আমরা আজ কোনো ভিক্ষা চাচ্ছি না, প্রণোদনা চাচ্ছি না, আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বার বার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়া হয়নি।’

তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি আমাদের টাকা ফেরত না পাই তাহলে রাজপথে অবস্থান করবো। প্রতিটি ফাইন্যান্স কোম্পানির সামনে আমরা ব্যানার টাঙিয়ে দেবো। আমরা লিখে দেবো ফাইন্যান্স কোম্পানিতে টাকা দিলে আপনি এক টাকাও ফেরত পাবেন না।একইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আমাদের টানা অবস্থান কর্মসূচি চলবে। অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি, আর পারছি না, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের অনেকে অসুস্থ, কেউ কেউ মারা গেছেন, কেউ চিকিৎসা করাতে পারছেন না, মেয়ে বিয়ে দিতে পারছেন না, সংসার চালাতে পারছেন না, আমাদের টাকা ফেরত দিন, আমরা বাঁচতে চাই।’

বিনিয়োগকারীদের একজন একেএম আনসার উদ্দিন বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করতাম, পাঁচ বছর হলো অবসর নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে আমার অবসরের টাকা আমি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছি। এখন এখান থেকে কিছু লাভ পাবো, মেয়ের বিয়ে দেবো। এখন আর কোনো টাকা পাচ্ছি না, কোনো লাভ দেয়া হয় না, সংসার চালাতে পারি না। আমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে, তার বিয়ে দিতে পারছি না। আমি সমাজে ভিক্ষা করতে পারছি না, আবার সংসার চালাতেও পারছি না। এ অবস্থায় আমার বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়া সমান কথা। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছি না, এটা লজ্জার, সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।’

রায়হান কবির নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘পিপলস লিজিং চোর, এটা মেনে নিলাম। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে পরিচালক পিপলস লিজিং দেখভাল করতেন তার উপস্থিতিতে কীভাবে টাকা পাচার হলো। তাহলে তিনিও কি চোর নন? ফারমার্স ব্যাংকের সমস্যা থাকায় সেখানে তিন হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়। ফারমার্স ব্যাংককে সচল করা হলো, তাহলে ফাইন্যান্স কোম্পানিতো বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিভুক্ত, তাদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত পিপলস লিজিং কী অন্যায় করলো যে এখানে একটা ফান্ড দেয়া হবে না? আমরা ছয় হাজার বিনিয়োগকারী পথে বসতে চলেছি। দুদক কর্তৃক পিকে হালদারের জব্দ করা এক হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে ৭৫০ কোটি টাকা দেয়া হোক। অন্তত আমরা যেন বাঁচতে পারি।’

মানববন্ধন থেকে বলা হয়, আর্থিক দৈন্যতায় এরইমধ্যে ১২ জন আমানতকারী মারা গেছেন। পিকে হালদারসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুটপাটে যারা জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

এসময় প্রায় দুই শতাধিক আমানতকারী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে দুপুর ১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে স্মারকলিপি পেশ করেন গ্রাহকরা। এ নিয়ে ৩ বার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীরা।