আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে নীরব উচ্ছেদ চলছেই


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পেছনে আপাতদৃষ্টিতে পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার ঘটনাকেই একমাত্র কারণ বলে মনে হতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এর মধ্যে তিক্ত এক সত্য লুকিয়ে আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের এই সংঘাতের শিকড় ইতিহাসের আরও অনেক গভীরে। ১৯৬৭ সালে গাজা দখলের পর থেকে আজ পর্যন্ত জায়নবাদী ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর কাঠামোবদ্ধ এমন অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি প্রতিদিনকার এই দুর্দশা ও দুর্ভোগকেই তাদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর চলা নিয়মিত অত্যাচার ও নির্যাতনের বিস্তারিত উঠে এসেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে।

মোহাম্মদ সানদৌকার বাড়ি আল-আকসা মসজিদ চত্বরের একেবারে লাগোয়া। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজ মালিকানার এই বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। হঠাৎ একদিন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের জন্য আল-আকসা চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে এই বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘোষণা দেয়। পুলিশ এসে জানায়, এখনই বাড়ি ভেঙে ফেলতে হবে, অন্যথায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বাড়ি গুঁড়িয়ে দেবে এবং ভাঙার খরচ বাবদ দশ হাজার শেকেলও দিতে হবে। বাধ্য হয়ে সানদৌকা নিজের বাড়ি নিজের হাতেই ভেঙেছেন।

এটা শুধু সানদৌকার একার গল্প নয়। হাজারো ফিলিস্তিনির মাথা গোঁজার ঠাঁই এভাবেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে, ফিলিস্তিনিদের বাড়ির দরজায় ইসরায়েলি পুলিশের ‘ঠকঠক’ শব্দ একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব জেরুজালেমে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদচেষ্টা ইসরায়েল-গাজা সংঘাতকে হয়তো তাতিয়ে দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ- ঘটনাটি সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর ও গাজার ৩০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি প্রতিদিন একই ধরনের নির্যাতন সহ্য করে আসছেন, যা কখনোই আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে আসে না। ইসরায়েল বারবার শান্তি আলোচনার দোহাই দিয়ে বিশ্বকে মূল ঘটনা থেকে আড়ালে রেখেছে। অথচ অর্ধশতাব্দী ধরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, অবমাননা ও হিংস্রতার মধ্য দিয়ে একেকটি দিন অতিবাহিত করছেন। হামাসের রকেট হামলার দোহাই দিয়ে সংঘবদ্ধভাবে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর, যা রকেট আক্রমণের চেয়েও বহুগুণে ভয়ংকর।

পশ্চিমতীরের বাসিন্দা বদর আবু আলিয়া (৫০) এক ভীতিকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। রাত ২টায় তার প্রতিবেশী আল মুঘরাইর বাড়িতে অভিযানে আসে ইসরায়েলি বাহিনী। গভীর রাতেই বাড়ির সবাইকে বাইরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়, তাদের আইডি কার্ড পরীক্ষা করা হয়। কারণ জিজ্ঞাসা করায় বলা হয়, রুটিন চেক, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দু’ঘণ্টা পর তারা বাড়ি ছেড়ে যায়, তবে যাওয়ার সময় প্রতিবেশীর কিশোর ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়। তার দোষ ছিল, কয়েকদিন আগে ইসরায়েলি স্নাইপাররা যখন গুলি করে ফিলিস্তিনিদের মারে, তখন সে সেনাদের দিকে পাথর ছুড়েছিল।

৪৫ বছর বয়সী মাজেদা আল রজবির ঘটনাও করুণ। তিনি পশ্চিমতীরে বসবাস করেন কিন্তু তার স্বামী ও পাঁচ ছেলে গাজার সুয়াফাত শরণার্থী শিবিরে থাকেন। সাধারণ ইসরায়েলিরা সব জায়গায় চলাফেরার সুযোগ পেলেও ফিলিস্তিনি হিসেবে তাকে পশ্চিমতীরের হেবরনেই বন্দি থাকতে হয়। তারাও এখানে আসতে পারেন না। ফলে স্বামী, সন্তান থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নই তিনি।

২০২০ সালে পূর্ব জেরুজালেমে ১১৯ ফিলিস্তিনিকে নিজেদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে ইসরায়েল। এ ব্যাপারে সানদৌকার মতামত নিতে তার মুখোমুখি হয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমস। আল-আকসার দিকে তাকিয়ে তার মন্তব্য ছিল- তারা (ইসরায়েল) অল্প অল্প করে এগোচ্ছে, যেভাবে একটা সিংহ প্রথমে একজনকে খায়, তারপর আরেকজনকে। ধীরে ধীরে সে তার আশপাশের সবাইকেই খায়।