বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যার মধ্যে ১-৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১০ হাজার।
অর্থাৎ প্রতিদিন ১-৪ বছর বয়সী ৩০টিরও বেশি শিশু শুধুমাত্র পানিতে ডুবে মারা যায় বলে জানায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।
শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে ৩০৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু, প্রসবকালীন মৃত্যু এবং প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু অনেক শিশু অপ্রত্যাশিতভাবে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ১-৯ বছরের শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মারা যাওয়ার সবচাইতে বড় ঝুঁকি পানিতে ডুবে মৃত্যু। এ মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে জলাধারে এবং দিনের প্রথম ভাগে। গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর এ হার শহরের চাইতে বেশি, যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে সেখানে পুকুর আর ডোবার মত ছোট ছোট জলাধারের সংখ্যা বেশি।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং তা হ্রাসের হার শতকরা ৮৮ ভাগের বেশি হতে পারে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে ৩টি কৌশল সবচেয়ে কার্যকরী। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু- যত্নের সুযোগ সৃষ্টি করা যেমন দিবাঘর কেন্দ্র। পানিতে সুরক্ষা ও নিরাপদ উদ্ধারের ওপর জোর দিয়ে ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং অভিভাবকদের সচেতনা বৃদ্ধি করা।
ঝুঁকি কমাতে ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি বেজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম সেইফ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে সরকার। চলতি সময় থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি সব বিভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে শৈশবকালীন আঘাত থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত সব সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে যথাযথ পদ্ধতিতে শিশুর সার্বিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম বাংলানিউজকে বলেন, শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। একটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এটা একেবারেই প্রাথমিক স্টেজে আছে।
প্রকল্পের সুনিদিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে দিনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত), যখন তাদের কেউ দেখাশোনা করার জন্য থাকে না, এ সময় সুরক্ষা দেওয়া, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়াসহ সব ধরনের আঘাত থেকে সুরক্ষা করা, শিশুর যত্ন কেন্দ্রগুলোতে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের বিভিন্ন সুবিধা (বুদ্ধিভিত্তিক, স্বাস্থ্যগত, পুষ্টিগত উন্নয়ন) স্থায়ীভাবে নিশ্চিতকরণ করা,
৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে নিরাপদ সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রদান, জাতীয় পর্যায় এবং তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়াসহ বিভিন্ন আঘাত থেকে সুরক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, শৈশবকালীন আঘাত রোধে এবং সেবা অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে পরিবার ও সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ এবং শৈশবকালীন আঘাত থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য ইতিবাচক প্যারেন্টিংয়ের বিষয়ে অধিকতর শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মহিলাদের উদ্বুদ্ধকরণ।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সূত্র জানায়, শিশুর সুষ্ঠু শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশে জীবনের প্রথম ৮ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মৌলিক চাহিদা, বিশেষ করে খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং শিক্ষার চাহিদা পূরণ করা শিশুদের বেঁচে থাকা ও জীবনকে পরিপূর্ণ সম্ভাবনাময় করার জন্য অত্যাবশ্যক। শিশুদের নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ ও মা – বাবাদের সচেতনতা বাড়ানো।
প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৮ হাজারটি সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু- যত্নকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ৬-১০ বছরের শিশুদের জন্য ১ হাজার ৬০০ জনকে সাঁতার প্রশিক্ষণ সুবিধা গ্রহণ এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্যারেন্টিং সেশন পরিচালনা যেখানে শিশুর বিকাশ ও শিশু সুরক্ষার- চর্চার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনার জন্য এনজিও নিয়োগ, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ, অফিস ভবন ভাড়া, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, গবেষণা, পরামর্শক সেবাক্রয়, যানবাহন ক্রয় ও ভাড়া এবং অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।