জাতীয়

বিএনপিতে গুরুত্বহীন ২০ দলীয় জোট!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই ‘পাওয়া না পাওয়া’র হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। নানা কারণ দেখিয়ে কেউ কেউ জোট ছেড়েও যাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ জোট ছাড়ছেন বিএনপির ছায়াতলে থেকে সরকারের দমন-পীড়ন সহ্য করতে না পেরে। আবার কেউ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন। অনেকেই আবার নতুন প্লাটফর্মের সন্ধান করছেন।

সবশেষ গত বুধবার জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। জোট শরিকরা মনে করেন, বিএনপির ‘সমন্বয়হীনতায়’ জোট গুরুত্ব হারাচ্ছে। প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য না থাকলেও দৈনিক খোলা কাগজের সঙ্গে আলাপকালে জোটের অন্তত তিনজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে বিএনপি মনে করে সরকারের চাপে তারা জোট থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।
গত বুধবার জোটের অন্যতম শরিকদল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম জোট থেকে বের হয়ে যায়। ২০ দল আবারও আলোচনা আসে। পুরানা পল্টনে সংগঠনটির জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক প্রাচীন ধর্মীয় সংগঠন জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। এ সময় দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
জোট ত্যাগের কারণ হিসেবে মাওলানা জিয়া উদ্দীন বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপির অনাস্থা ও জোটের শরিক দল হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করা জমিয়তের জন্য কল্যাণকর। আজ থেকে জোটের কোনো কার্যক্রমে জমিয়ত থাকবে না।
তিনি বলেন, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই উপনির্বাচন এককভাবে বর্জন করা, আলমদের গ্রেফতারের যথাযথ প্রতিবাদ না করা, জমিয়ত মহাসচিব মরহুম আল্লামা নূর হোসেন কাসেমীর মৃত্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা না জানানো এবং তার জানাজায় শরিক না হওয়া এগুলো দুঃখজনক।
সূত্র জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জমিয়তের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী ও মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ জামী। জমিয়তের একটি সূত্রের দাবি, জুনায়েদ আল হাবিব ও মনির হোসেন কাসেমী ছাড়া বাকিদের মুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে জোট-ছাড়ার বিষয়টি কাজে দিতে পারে। এ বিষয়ে এতদিন পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মত থাকলেও এখন জোট ছাড়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এখন দুই ভাগে বিভক্ত। উভয় অংশ বিএনপি- জোটের শরিক। ‘ভারপ্রাপ্ত’ হয়ে একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)। এই অংশের সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন গত বছর মারা গেলে মাওলানা জিয়াউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর এ বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, যিনি গত এপ্রিল থেকে হেফাজতের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। আফেন্দির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। মুফতি ওয়াক্কাসের অনুসারীরা জোট ছাড়ার পক্ষে নন।
২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হ্রাস পেতে থাকে এই জোটের কর্মকাণ্ড। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপির কাছে ২০ দলীয় জোট গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ২০ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আইনি জটিলতায় না থাকলে তাদের এমন অবস্থা কোনোভাবেই হতো না। কারণ ২০ দলীয় জোটে থাকার কারণে তাদেরকে বহুবার তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হতে হয়েছে, জোট নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলাসহ নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার সাথে তাদের যে বোঝাপড়া ছিল এখন যারা বিএনপি চালান তাদের সেই জ্ঞান নেই। বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই রয়েছেন আর গ্রেফতার হতে চান না, রাজপথে আন্দোলন করতে চান না। ব্যক্তিগতভাবে নিজে ভালো থেকে শুধু মুখে মুখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চান। এভাবে তো রাজনীতি হয় না। এ অবস্থায় বিএনপির এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তায় জোট ও দলের মধ্যে এক ধরনের অস্তস্তি কাজ করছে। ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়াবেন তিনিই সমর্থন পাবেন’-এই ফর্মূলায় নতুন প্লাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা বলেন, বর্তমানে যারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এমন নেতারাও নতুন প্লাটফর্ম খুঁজছেন। জোটের শরীক ছাড়াও বিএনপির নিষ্ক্রিয়, পদবঞ্চিত ও পদত্যাগকারী সাবেক বেশ কিছু নেতা এই জোট গঠনের সঙ্গে রয়েছেন। এতে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও আমলারাও আছেন। ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী, কল্যাণ পার্টিসহ কয়েকটি দল এবং বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কয়েকটি দল রয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি বাম-ডান ও ইসলামী ঘরানার দল যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই আলোচনা চলে আসছে। সম্প্রতি বিএনপি থেকে দুই নেতা পদত্যাগ করার পর তা আবারও আলোচনায় আসে।
সূত্র জানায়, দুদিন আগে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে ফিরে পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকের পর তারা জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, জমিয়তের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার আছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। অনেক নেতাকর্মী চাপে রয়েছেন। সে অবস্থায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটা আর বোঝার বাকি নেই, তারা কেন জোট ছেড়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাদের জোটে সঙ্গে ছিলেন। জোট ছাড়ার মাধ্যমে তাদের কারাবন্দি নেতারা যদি মুক্তি পান তাহলে সবার জন্য ভালো খবর। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা আর সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা জোট থেকে বের হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, জোটে তারা মূল্যায়ন পাননি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ। এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, কারোনা মহামারীর কারণে ২০ দলের কোনো তৎতপরতা নেই। আসলে এখন তো কোনো রাজনীতিই নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০ দল তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে। তার বিশ্বাস-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে ২০ দল আবারও চাঙ্গা হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, জোটের অধিকাংশ নেতাই রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় কথাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। করোনা মহামারীর মধ্যে আমরা জোটের কয়েক নেতাকে হারিয়েছি। এছাড়া অনেকেই আছেন যারা এই সময়ে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করাটাকে সমীচীন মনে করছেন না। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তাদের সীমিত সামর্থেরে মধ্যে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া কিছু দল জোটের বাইরে কোনো কর্মসূচি ছাড়া সক্রিয় ছিল না এবং বরাবরের মতো তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে।