প্রধান পাতা

ব্ল্যাকমেইল করে চাচিকে ধর্ষণ, সমঝোতা করতে ব্যস্ত ওসি


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নওগাঁর বদলগাছীতে গৃহবধূর গোসলের ছবি গোপনে মোবাইল ফোনে তুলে ব্ল্যাকমেইল করে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ এবং শেষ পর্যন্ত এডিট করে ভিডিওচিত্র মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তের নাম জয় (২৪)। ওই যুবক গৃহবধূর স্বামীর আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২৪ মে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। অভিযোগের তিন দিন পার হলেও পুলিশ ওই যুবককে আটক করেনি। উল্টো গৃহবধূকে থানায় নিয়ে বিষয়টি রফা-দফা করতে নাটকীয়তা করছেন ওসি। এদিকে অশ্লীল ছবি বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ার পর গৃহবধূকে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী।


জানা গেছে, আট বছর আগে গৃহবধূর বিয়ে হয়। এ দম্পতির সাত বছরের একটি মেয়ে আছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ওই যুবক গৃহবধূর অশ্লীল ছবি তোলেন মিঠাপুর ইউনিয়নের ভেরেন্ডি সানাপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদের ছেলে জয়। পরে ছবি থেকে ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেন। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে গৃহবধূকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

একপর্যায়ে গৃহবধূ বিষয়টি তার স্বামীকে জানান। তখন যুবকের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। এতে যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেশী এক নারীর মাধ্যমে স্থানীয়দের মোবাইলে গৃহবধূর অশ্লীল ছবির ভিডিও ছড়িয়ে দেন। ভিডিও প্রকাশের পর গৃহবধূকে তার স্বামী তালাক দেন। এরপর গৃহবধূ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের চার দিন পার হলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমার স্বামীর ভাতিজা গোসলের ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে কুপ্রস্তাবে সাড়া দিতে হয়েছে। ৩/৪ দিন সে শারীরিক সুবিধা নিয়েছে। ৮ মাস আগে ওই ভাতিজা বিয়ে করে। তারপরও সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চায়। এতে রাজি না হওয়ায় ছবি থেকে ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়। প্রথম ভিডিও প্রতিবেশী এক নারীর মাধ্যমে ছড়ানো হয় বলে জানতে পেরেছি। তবে ভাতিজার নামে থানায় অভিযোগ করেছি, যেহেতু সে ছবি তুলে ছড়িয়ে দিয়েছে। পরে ভিডিওর বিষয়ে জানাজানি হলে আমার স্বামী আমাকে তালাক দেন।’

গৃহবধূ আরো বলেন, ‘কিন্তু আমি আমার স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই। এখন পর্যন্ত থানা-পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে আমাকে ছোট হতে হচ্ছে লজ্জায়। বিনা অপরাধে সম্মান, স্বামী, সংসার সবকিছু আমি হারালাম।’

এ বিষয়ে গৃহবধূর স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা শুরু হলে স্ত্রী আমাকে জানায়। ভাতিজার বাবা-মাকে জানানো হলে কিছুদিন ভালো ছিল। এরই মধ্যে ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় আদালতের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি। কাগজটা তার কাছে হয়তো পৌঁছায়নি। তবে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। কার দোষ কম বা বেশি সেটা হিসাব করতে চাই না। তার সাথে আর সংসার করতে চাই না।’ এরপর তিনি ফোনটি কেটে দেন।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেশী শিউলি খাতুন (৩৬) বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার বাড়িতে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময় আমার এক ভাতিজা তার মোবাইলের মেমোরি কার্ড দিয়ে আমার বাড়ির টিভিতে গান দেখছিল। এমন সময় গৃহবধূর অশ্লীল ছবির ভিডিওটি দেখে ছেলেরা চিৎকার দিয়ে ওঠে। পরে ঘরের ভেতরে এসে টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ভিডিওটি আমি ছড়াইনি। পরে কীভাবে ভাইরাল হলো, তা আমি জানি না।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে সমঝোতার নামে ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে ভুক্তভোগীকে সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় থানার ভেতরের কয়েকটি কক্ষ ঘুরে তাদের পাওয়া যায়নি। পরে থানার পেছনের ছোট যমুনা নদীর বাঁধের রাস্তায় যান এই প্রতিবেদক। বুধবার বিকাল ৪টার দিকে থানা চত্বরের উত্তরদিকে কোয়ার্টারের সামনে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও দুইজন পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় এক নারী কনস্টেবল এসে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে কোয়ার্টারের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, গত ২৪ মে গৃহবধূ লিখিত অভিযোগ করেছেন। একটি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিডিওটি অস্পষ্ট হওয়ায় ভিডিওটির সঙ্গে গৃহবধূ বা অভিযুক্তের তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্তকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় আছে কিনা এবং সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, গৃহবধূ থানায় আসেনি বা সমঝোতার কোনো প্রক্রিয়া করা হচ্ছে না।