জাতীয়

ভীতি-আনন্দের মিশেলে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

আর মাত্র চারদিন পর খুলছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১৮ মাস পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দিত। তবে একইসঙ্গে ভীতিও কাজ করছে বহু অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। তাদের অভিমত, বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদানের ব্যবস্থা করে তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করলে শিক্ষার্থীদের মন থেকে করোনার ভয় কাটতো।
এদিকে, স্কুল কলেজ খোলার আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরকার ঘোষিত ১৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ১৮ মাসের জঞ্জাল ও স্থবিরতা সরিয়ে মাত্র ৫/৬ দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা আদৌ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনেকেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী বলেন, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল ও আর্থিক অবস্থা এক রকম না। ৫ তারিখ ঘোষণা দিয়ে ৯ তারিখের মধ্যে ১৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে। যা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অসম্ভব। সরকারি এবং শহরের বড় বড় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারলেও বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা অসম্ভব। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় না এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা মানে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নেয়া। সরকার ইচ্ছে করলে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনা যেত। তাহলে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেত পারতো।
তিনি আরো বলেন, গ্রামে অনেক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের সাথে অবশ্যই অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে, দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার কারণে মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার কারণে, সরকারের ১৯ দফা বাস্তবায়ন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সরকার টিকা দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। আর বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ রেখে স্কুল ও কলেজ খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বিষয়টা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে। প্রথমে বিশ^বিদ্যালয় খোলার পর টিকার আওতায় এনে ধাপে ধাপে স্কুল-কলেজ খুলতে পারতো সরকার। তাছাড়া, ঘোষণা দেয়ার এত দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দিয়েছে, সময়, জনবল ও অর্থের অভাবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হবে মনে হচ্ছে না।
জানতে চাইলে সেন্ট প্লাসিডস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত রোজারিও বলেন, গত মার্চ থেকেই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে কোন সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারবো। তবে গ্রামাঞ্চল এবং শহরের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এত অল্প সময়ে স্বাস্থবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা কঠিন হবে। যেহেতু সরকারি নির্দেশনাগুলো মানতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তেমন অর্থ পায়নি। তাই এত দ্রুত সময়ে সরকারের সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হিমশিম খেতে পারে। তাছাড়া, ভ্যাকসিন ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আতংক কাজ করবে।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও আমরা কিছুদিন পর পর ক্লাস রুম এবং আশপাশ পরিষ্কার করেছি। শিক্ষার্থী স্কুলে না এলেও এসাইনমেন্ট নিয়ে অভিভাবকরা আসতেন। তাই প্রতিটি ওয়াশরুমের পাশে হাত পরিষ্কার করার জন্য আমরা বেসিন বসিয়েছি এবং সাবান ও লিকুয়িড রয়েছে।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, সশরীরে ক্লাস চালুর ব্যাপারে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। আমরা নিয়মিতভাবে ক্লাসরুম ও কলেজ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত রেখেছি। তবুও সরকারের নির্দেশনা আসার পর পরই আমরা মিটিং করেছি। শিক্ষার্থীদের আমরা কোথায় এবং কিভাবে বসাবো, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি ডিজাইন করেছি। যাদের নিয়মিত ক্লাস হবে, তাদের একভাবে বসাতে হবে এবং যাদের অনিয়মিত ক্লাস হবে, তাদের একভাবে বসাতে হবে। আশা করছি সরকারের সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেই আমরা সশরীরে পাঠদান করতে পারবো।
এত দ্রæত সময়ের মধ্যে সরকারের ১৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ এলাহী বলেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলাপ করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব নির্দেশনা দিয়েছে। আর যেহেতু আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য বারবার বলা হয়েছিল, তখন থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না।