আন্তর্জাতিক

ভুল করে কোকেন-বাসে, ৭ বছরেও ফেরেনি ৪৩ ছাত্র, জানা গেল রহস্য


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নতুন কিছু টেক্সট মেসেজের সূত্র ধরেই যেন ফিরে এল সেই ভয়াল ২০১৪ সাল। সে বছরের সেপ্টেম্বরের এক রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম মেক্সিকো থেকে হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ৪৩ জন কলেজ শিক্ষার্থী (টিচার্স কলেজের শিক্ষানবিশ শিক্ষক)।

যে টেক্সটগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো আদান-প্রদান হয়েছিল একজন ড্রাগ কার্টেল চিফ ও এক উপ পুলিশ প্রধানের মধ্যে। টেক্সটগুলো থেকে জানা যায়, অপরাধপ্রবণ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আর মাদকচক্রের সদস্যরা মিলে কিভাবে হরণ, নির্যাতন ও হত্যা করেছিল হারিয়ে যাওয়া ওই ৪৩ জন শিক্ষার্থীর ৩৮ জনকে।

শিক্ষার্থীরা একটি বড় ভুল করে ফেলেছিল আর তা হলো, যে বাসগুলোতে চড়ে তারা মেক্সিকো শহরে একটি প্রতিবাদ সভায় অংশ নিতে যাচ্ছিল ওই বাসগুলো ছিল মূলত একটি মাদক পরিবাহী চেইন বাস সার্ভিস। সেই বাসগুলোতে করে বিপুলপরিমাণ কোকেন যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত এলাকায়। আর ভুলবশত সেখান থেকে কিছু মাদক ‘চুরি’ করে ফেলে শিক্ষার্থীরা। 

সে সময় ওই এলাকার মাদক সিন্ডিকেট গুয়েরেরোস ইউনিদোস কার্টেল এর লোকাল বস ছিলেন গিলদার্দো লোপেজ আস্তুদিলো আর দক্ষিণ-পশ্চিম মেক্সিকোর ইগুয়ালা শহরের মিউনিসিপাল পুলিশ ফোর্সের উপ-প্রধান ছিলেন ফ্রান্সিসকো সালগাদো ভাল্লাদারেস।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে সালগাদো টেক্সট করে লোপেজকে জানান যে তাঁর অধীনস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা দুই দল শিক্ষার্থীকে আটক করেছে যারা ওই মাদকবোঝাই বাসগুলো কবজা করেছিল। এরপর সালগাদো লেখেন, ২১ জন শিক্ষার্থীকে বাসে রাখা হয়েছে। উত্তরে লোপেজ জানান তাঁর পরিকল্পনার কথা। তিনি চেয়েছিলেন, স্থানীয় কোনো একটি নির্জন সড়কে শিক্ষার্থীদের হাতবদল করা হবে এবং নির্যাতন ও হত্যা করে কোনো একটি গোপন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

এরপর উপ পুলিশ প্রধান ফ্রান্সিসকো সালগাদো আবার লেখেন যে তিনি আরো ১৭ জন শিক্ষার্থীকে পেয়েছেন। উত্তরে লোপেজ লেখেন, তিনি তাদের সবাইকেই চান।

এর পর তাঁরা দুজন পরিকল্পনা করেন ‘উলফস গ্যাপ’ নামে একটি স্থানে একত্রিত হবেন। সেই সঙ্গে সালগাদো লোপেজকে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেন যে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আরো বেশ কিছু লোকের প্রয়োজন হবে। 

রাত গভীর হলে সালগাদো ক্রাইম বসকে জানান, ‘সব প্যাকেজ ডেলিভারি হয়ে গেছে’।  

সামান্য কিছু হাড়ের টুকরো ছাড়া ওই শিক্ষার্থীদের আর কিছুরই সন্ধান মেলেনি- আজও।

kalerkantho

ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের সাবেক প্রধান মাইক ভিজিল দ্য ডেইলি বিস্টকে বলেন, এটা খুব শক্তভাবেই প্রমাণ হচ্ছে যে লোপেজই ছিলেন এই কর্মের মূল হোতা। তিনিই সালগাদোকে ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করতে বলেছিলেন। নতুন তথ্য-প্রমাণ হাতে আসার পর বোঝা যাচ্ছে- সেই ছাত্র হত্যাযজ্ঞের জন্য এই কার্টেল বসই দায়ী। আয়োৎসিনাপার ছাত্রদের ওপর পরিচালিত এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ মনে হয় যেন এক হলিউড মুভি। আসলে এটা কোনো মুভি নয়, বাস্তবতা। 

ছাত্রদের সবাই ছিল আয়োৎসিনাপা রুরাল টিচার্স কলেজের। যাঁরা আয়োৎসিনাপা ৪৩ নামেই পরিচিত হয়। কলেজটি বামপন্থী মতাদর্শের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। যে রাতে ওই ৪৩ ছাত্র নিখোঁজ হয় সে রাতে আরো অন্তত ১০০ জন ছাত্র রাজধানীতে প্রতিবাদ সভায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ১৯৬৮ সালে তাতেলোককা ছাত্র হত্যাযজ্ঞের স্মরণসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিল তারা। অধিকাংশ শিক্ষানবিশ শিক্ষকই ছিলেন তরুণ। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যিনি- জোস অ্যাঞ্জেল নাভারেত ছিলেন মাত্র ১৮ বছর বয়সী। তাঁকে বন্ধুরা আদর করে ডাকত- পেপে।
সূত্র : দ্য ডেইলি বিস্ট (সংক্ষেপিত)