Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা নিরাপদে ধান কেটে গোলায় তোলেছেন। ‘ধান হলেই ধনী’ এমন বাক্য প্রচলিত রয়েছে এবার সুনামগঞ্জের হাওরে। সোনালী ধান ঘরে তুলতে পেরে কৃষকরা খুশি।
জেলাজুড়ে যখন বৈশাখী ধান কাটার উৎসব তখন হতাশা ও ক্ষোভে ধানের জমিতে আগুন দিয়েছেন এক কৃষক সন্তান। সম্প্রতি জেলার শাল্লার উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বর্গা নিয়ে চাষ করা জমির পুরো ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাকুয়া গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত দাশের ছেলে রনি দাস মনের দুঃখে আগুন দিয়ে প্রায় দেড় কেদার ধান পুড়িয়ে দিয়েছেন।
ধানের দেবী লক্ষী ও বসুন্ধরা কষ্ট পাবেন এই ভেবে ছেলে রনিকে ধানে আগুন দিতে বারণ করেছেন বাবা কৃষক নিশিকান্ত দাস। ধানের জমিতে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জমিতে আগুন দেওয়া কৃষক সন্তান রনি দাস হতাশার সূরে বলেন, ‘আমাদের ৬ কেদার জমি ছিল। সেই জমি বন্ধক রেখে টাকা এনে বোনের বিয়ের খরচ করেছি। এরপর আমরা অন্যের জমি বর্গা চাষ করি। এবার গ্রামের অসীম সিংহের ৫ কেদার জমি নগদ ১৭ হাজার টাকায় বর্গা চাষ করেছি। সার-বীজ ও চাষসহ প্রায় ১০ টাকা খরচ হয়েছে। ৪৪ জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করেছিলাম। আশা ছিল অন্তত ১০০ মণ ধান পাব। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ, সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।’
রনি দাস আরও বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগে যখন জমির ধান সাদা হয়ে মরার মতো হচ্ছিল তখন গ্রামের মেম্বারকে জানিয়েছি। তবে ভুল করে কৃষি বিভাগকে জানানো হয়নি। দিরাই থেকে কীটনাশক এনে দিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কাটার জন্য ধানে ধরলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যায়। তাই কয়েকদিন আগে মনের দুঃখে ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। তবে বাবার বাধার কারণে সব ধান পুড়ানো সম্ভব হয়নি।’
ধান নষ্ট হওয়ার পর সরকারি কোনো ধরনের সহায়তা পাননি, তাই গরু বিক্রি করে কিছু ধান ক্রয় করেছেন বলে জানান তিনি।
চাকুয়া গ্রামের বাসিন্দা হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিথিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘নিশিকান্ত দাসের জমির ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি আমি উপ সহকারী কৃষি অফিসার জয়ন্ত বাবুকে জানিয়েছি। তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে কথা বলেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও বিষয়টি অবগত করেছি।’
শাল্লা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ৪ এপ্রিল গরম হাওয়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দিয়েছিল। যারা আমাদের কাছে এসেছেন ও আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। চাকুয়া গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত দাসের জমির বিষয়টি জানা যায়নি। আজই আমরা সরেজমিনে দিয়ে তার জমিটি দেখব।’
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, ‘চাকুয়া গ্রামের একজন কৃষকদের পুরো জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া ও আগুন দেওয়ার ঘটনাটি কেউ আমাদের জানায়নি। খুব শিঘ্রই খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বোরো মৌসুমে শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন। যার বাজার দাম প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।