চট্টগ্রাম

মাছ চাষের লিজ নিয়ে গ্যারেজ!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নগরীর জাকির হোসেন সড়কের রেল ক্রসিং থেকে উত্তর দিকে ঝাউতলা-ষোলশহর রেল লাইন ধরে কিছুদূর গেলেই চোখে পড়ে একটি গাড়ির গ্যারেজ। বাস্তবে গ্যারেজ হলেও রেলওয়ের নথিপত্র বলছে এটি জলাশয়। শূন্য দশমিক ৩৩ একরের পাড়বিহীন এই জলাশয়টি মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন বিপ্লব সেন নামের এক ব্যক্তি। ২০১৭ সালে ১৬টি শর্তে ৫ বছরের জন্য তাকে এই জলাশয়টি লিজ দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তবে লিজ নেওয়ার শর্তগুলো মানছেন না বিপ্লব সেন। জলাশয়ের একাংশ ভরাট করে গাড়ির গ্যারেজ বানিয়েছেন তিনি। রেল লাইন থেকে ২০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত কোনো স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ না থাকলেও ৫ ফুট দূরত্বে টিনের তৈরি বেড়া দিয়ে জলাশয়টি ঘেরাও করেছেন। চুক্তিতে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের ওযু, গোসলে জলাশয়টি ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা বলা হলেও সেই সুযোগ রাখেননি বিপ্লব সেন। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঝাউতলা-ষোলশহর রেল লাইনের ৪/৫ নম্বর পিলার থেকে ৪/৬ পিলারের কাছাকাছি রেল লাইনের পশ্চিম পাশের শূন্য দশমিক ৩৩ একরের জলাশয়টির বর্তমান ইজারাদার বিল্পব সেন নগরীর জুবলী রোডের বিএস কর্পোরেশনের মালিক। লিজের শর্ত অনুযায়ী ওই জলাশয়ে মাছ চাষ ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ নেই তার। শর্ত ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক স্থাপনা করলে তার চুক্তিটি বাতিল করা হবে।

সরেজমিন যা দেখা গেছে:
গত রবিবার বিকালে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- দেখতে অনেকটা আয়তকার রেলওয়ের এই জলাশয়ের উত্তর পাশে মাছ চাষের জন্য ছোট করে জলাশয় রাখা হলেও দক্ষিণ পাশে মোট জলাশয়ের প্রায় অর্ধেক জায়গা ভরাট করে গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন মোটরযান মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্যারেজের শ্রমিকরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে লিজ নেওয়ার পরে জলাশয়টির দক্ষিণ ও পূর্বপাশে টিনের ঘেরা দেওয়া হয়। যে কারণে স্থানীয়রা এই জলাশয় ব্যবহারের সুযোগ হারায়। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে লকডাউনের মধ্যেই সেখানে বাণিজ্যিকভাবে গাড়ির গ্যারেজটি স্থাপন করা হয়।

স্বেচ্ছায় শর্ত ভঙ্গ করিনি:
রেলওয়ের জমির অপব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব সেন দাবি করেন- রেলওয়ের এই জলাশয়টি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দখলে ছিলো। তিনিই তা উদ্ধার করে রেলওয়েকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে রেলওয়ে থেকে মাছ চাষের জন্য জলাশয়টি ৫ বছরের জন্য লিজ নেন।

মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়ে জলাশয় ভরাট করে গাড়ির গ্যারেজ কেনো? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জলাশয় আমি ভরাট করিনি। রেলওয়ে ভরাট করে আমাকে মৌখিকভাবে সেখানে গাড়ির গ্যারেজ করতে বলেছে। এই গ্যারেজে রেলওয়ের জিএমসহ কর্মকর্তা এবং রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ি মেরামত করা হয়। আমি স্বেচ্ছায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করিনি।

চুক্তি ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা:
তবে বিল্পব সেনের এসব দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবউল করিম। তিনি বলেন, রেলওয়ের গাড়ি ওই গ্যারেজে মেরামত করতে হবে কেনো? রেলওয়ের গাড়ি মেরামতে সরকারের নির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। যে কোনো গ্যারেজ থেকেই রেলওয়ের গাড়ি মেরামতের সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, জলাশয় ভরাট করার যে অনুমতির কথা বলা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের জলাশয় লিজ নিয়ে তা ভরাট করে গাড়ির গ্যারেজ কিংবা অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। গাড়ি মেরামতেরও সুযোগ নেই। চুক্তি ভঙ্গ করে ইজারাদার এই কাজ করলে আমরা রেলের ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

অনিয়ম পাশের জমিতেও:
জলাশয়টির উত্তর পাশে রেলওয়ের শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ জমি নার্সারি করার জন্য ২০২০ সালে ৫ বছরের জন্য লিজ নেন কাউসার জাহান চৌধুরী নামে এক নারী। তবে এখন ওই জায়গায় নার্সারি তৈরি করার পাশাপাশি মেয়েদের স্কুটি চালানো শেখানো হচ্ছে। শর্ত ভেঙে ভরাট করা হচ্ছে জমি।

নার্সারির ভেতরেই ‘স্বস্তি প্রশিক্ষণ ফিল্ড’ শিরোনামে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। বিকালে নার্সারির সামনের ফাঁকা জায়গায় নারীদের টাকার বিনিময়ে স্কুটি চালোনোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত রবিবার বিকালে স্বস্তি নার্সারি নামে ওই নার্সারিতে গিয়ে মেয়েদের স্কুটি চালানো শেখানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। নার্সারির জন্য জমি লিজ নিয়ে স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউসার জাহান চৌধুরীর স্বামী আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, নার্সারির জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে নার্সারিই করা হয়েছে। কোনো শর্ত ভঙ্গ করা হয়নি। তবে নার্সারির মাঝে ফাঁকা জায়গায় কয়েকজন নারী স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। বিনা খরচেই তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।