চট্টগ্রাম

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি রফিক আহমেদ!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

রফিক আহমেদ। দেশের টানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটাই তাঁর বড় পাওয়া। তারপরও একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে তাঁর। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, অথচ এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তিনি।

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া রফিক আহমেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের বাসিন্দা। সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত রফিক আহমেদ বর্তমানে নিজের গ্রামের বাড়িতে জীবনের শেষ সময়টুকু অতিবাহিত করছেন নানা দুঃখ কষ্টে।

স্মৃতিচারণ করে রফিক আহমেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজের গনিত বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এপ্রিলে স্যারসহ আমরা ভারত যাওয়ার প্রস্ততি নিতে থাকি। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হই। স্যারের গাড়ি ছিল সবার আগে। জিপ রওয়ানা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশে। ইমাম গাজ্জালি কলেজ পার হবার পর আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। জানতে পারি স্যারের উপর হামলা হয়েছে। এ হামলায় স্যারসহ অনেকে শহীদ হন। তখন আমার ভারত যাওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর পটিয়ার পূর্ব পাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাঠি আলম, হাবিলদার ইছহাকের অধীনে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে যোগ দিই। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে হানাদার বাহিনী আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমার মা-বাবার উপর অনেক নির্যাতন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলাম।’

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য গত বছরের ১৯ জানুয়ারি আবেদন করেছেন বলেও জানান রফিক আহমেদ; যার নাম্বার ৭০৮১৬৪০০৫২০৩২৫। এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরও একটি আবেদন করেন তিনি।

রফিক আহমদের ছেলে মোজাম্মেল হক এরশাদ বলেন, ৬৯-এ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে পড়ার সময় ১১ দফা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ছিলেন আমার বাবা। রণাঙ্গণে ওনার অবিস্মরণীয় অবদান থাকা সত্বেও স্বীকৃতি মেলেনি আজও। বর্তমানে আমার বাবা অসুস্থ। মস্তিস্কের এক পাশে ব্লক ধরা পড়েছে। যার কারণে অনেক কথা এখন ভুলে যাচ্ছেন। ওনাকে স্বীকৃতি দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মিজোরামের দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পের গ্রুপ লিডার এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন জানান, রফিক আহমেদ তার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। রফিক আহমেদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রত্যয়নও দিয়েছেন এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন।

রফিক আহমেদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রফিক আহমেদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কী কারণে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি, আমি বুঝতে পারছি না। আমি তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছি।’

পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রফিক আহমেদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও ২০১৭ সালের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর নাম আসেনি। আমি আশা করছি পরবর্তী ধাপে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।’