দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের মহাশ্মশান সড়কের শেষ প্রান্তে ছোট একটা ঘর। ঘরের সামনে গ্রিল দিয়ে আটকানো কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির রাইজার। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে চুলায় রান্নার কাজ করছেন গৃহিনী ঝর্ণা তলাপাত্র। সকাল বেলা একমাত্র ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের জন্য রান্নায় ব্যস্ত তিনি। গ্যাসের চাপ না থাকায় সংযোগ থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না। কয়েকবছর ধরে এভাবেই বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ করছেন তিনি। নগরীর বন্দর থানাধীন ৩৮ নং দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরের ১ নং সাইট হিন্দু পাড়া এলাকা ও এর আশেপাশে এক হাজারেরও বেশি পরিবারের এটিই এখন প্রধান সমস্যা। প্রায় দশ বছর ধরে চুলায় গ্যাসের চাপ নেই। টিমটিম জ্বলা চুলায় রান্না করা যায় না। বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে কাঠ, কয়লা অথবা সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে চলে রান্নার কাজ। গতকাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- গ্যাস সংযোগ থাকা সত্তে¡ও প্রতিটি ঘরে বিকল্প উপায়ে চলে রান্নার কাজ। গৃহিনী ঝর্ণা তলাপাত্র বলেন, গত ছয়-সাত বছর ধরে গ্যাসে চাপ না থাকায় চুলা জ্বলে টিমটিম। চুলায় রান্না করতে না পারলেও প্রতিমাসে বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। অথচ পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। ছেলে-মেয়েদের টিউশনির টাকায় চলে সংসার। এ অবস্থায় প্রতিমাসে কিনতে হয় গ্যাসের সিলিন্ডারও। এ অতিরিক্ত বোঝা টানতে গিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। একই এলাকার সিএন্ড এফ ব্যবসায়ী সুমন কান্তি দে বলেন, গত দশবছর ধরেই গ্যাস সংযোগ ও নিয়মিত বিল দিয়ে আসলেও বাস্তবে তা ব্যবহার করতে পারছি না। একসময় মোটামুটি ব্যবহার করা যেত। কিন্তু ওয়ার্ডে বেশ কিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশন স্থাপনের পর গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। এছাড়া প্রায় ত্রিশ বছর আগে স্থাপিত এ এলাকার গ্যাস লাইনে এখনো কোন সংস্কার কাজ হয়নি। তিনি আরো বলেন, এ এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ভোটার। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা এসে সমস্যা সমাধানের আশ^াস দিয়ে যান। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না।
৩৮ নং ওয়ার্ডের এ অংশে গ্যাসের চাপ কম থাকার কথা স্বীকার করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, মূল সঞ্চালন লাইন থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে এ এলাকায় গ্যাসের চাপ কম। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। এলাকায় আরেকটি প্যারালাল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন লাইন স্থাপন হলে এ অংশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। এ ব্যাপারে কোম্পানির প্রকৌশল শাখায় যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, নতুন লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। তবে এখনও দরপত্র আহবান করা হয়নি।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর এখন একটাই দাবি- দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হোক।
