জাতীয়

যুবক মুনাফ ফিরলেন বৃদ্ধ হয়ে


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

মনে আছে, বাংলা সিনেমার সেই পরিচিত দৃশ্যপট। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক চড়াই-উতরাই শেষে যুবক বয়সে স্বজনদের সন্ধান পাওয়া। সিনেমার এই দৃশ্যপটের মতো হুবহু না হলেও খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলার ফকির টিলার আবদুল মুনাফের জীবনের গল্পটাও এমনই।

১৯৮৭ সালে ৩৫ বছরের টগবগে যুবক ছিলেন মুনাফ। বাবা-মা চার বোন ও ছয় ভাইয়ের অভাবের সংসার। স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েকে রেখে ১৯৮৭ সালে অবৈধপথে কর্মের সন্ধানে পাড়ি জমান ভারতে। সেখানে স্থায়ী কাজ না পেয়ে এক বছর পর আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে চলে যান পাকিস্তানের করাচিতে। সেখানেও ভাগ্য তাকে সুপথ দেখায়নি। এরপর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে জেলে যেতে হয়েছে কয়েকবার। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়ায় পরিবারকেও জানানোর সুযোগ ছিল না। এভাবে কিছু দিন জেলে কিছু দিন বাইরে থেকে জীবনের ৩৫টি বছর কেটে গেছে। অবশেষে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস/রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে যুবক অবস্থায় বাড়ি থেকে বের হওয়া মুনাফ বুধবার (২৯ জুন) পরিবারের কাছে ফিরেছেন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ হয়ে।

মুনাফ বলেন, ‘১৯৮৭ সালে সংসারের অভাব দূর করতে দালালের মাধ্যমে অবৈধপথে ভারতে যাই। এরপর পাকিস্তান। অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় ভালো কোনও কাজ না পেয়ে পাকিস্তান উপকূলে মাছ ধরার কাজ নিয়েছিলাম। ৩৫ বছরের প্রবাস জীবনের ১৭ বছর কেটেছে পাকিস্তানের কারাগারে। বৈধ পথে দেশে ফেরার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আবারও বেছে নিই অবৈধপথ। ভারতে প্রবেশের সময় আবারও ধরা পড়ি পাকিস্তান সীমান্তে। কারাগারে থাকার সময় পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট জানতে পারে অসহায়ত্বের গল্প। পরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ মাসের চেষ্টায় গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) ঢাকায় ফিরি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মাটিতে পা পড়ার পর চোখে জল আসে। জেলে থাকার সময় মনে হতো আর কখনও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহ অবশেষে আমাকে দেশের মাটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছেন। এখন মরে গেলেও আর দুঃখ থাকবে না।’

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, খাগড়াছড়ি ইউনিট কর্মকর্তা আবদুল গণি মজুমদার জানান, গত ২৮ জুন  তিনি দেশে ফেরেন। পরে সব কার্যক্রম শেষে বুধবার বিকালে তাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

বড় ভাই মো. আবদুল জব্বার সর্দার বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাড়ি ফিরে আসায় সবাই খুশি। পরিবারের আয়ের কথা ভেবে একদিন আমার ভাই মুনাফ ভারতে যান। এরপর নিরুদ্দেশ। ভাইকে ফিরে পেতে অনেক চেষ্টা, খোঁজ খবর নিয়েও সন্ধান মেলেনি। ফলে আমরা ভাইয়ের স্ত্রী তার স্বামীর এবং ছেলেমেয়ে তাদের বাবার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তার স্ত্রী বৃদ্ধ হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েও বড় হয়ে গেছে। তারা বিয়েও করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু সম্প্রতি রেড ক্রিসেন্টের পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন বিভাগের অনুসন্ধানে পাকিস্তানের একটি কারাগারে খোঁজ মেলে ভাইয়ের। পরে সংগঠনটির সদরদফতর, পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। ভাইকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।’

মানিকছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বুধবার তাকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৩৫ বছর পর মুনাফকে পেয়ে খুশি স্বজন ও এলাকাবাসী।’ তিনি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের খাগড়াছড়ি ইউনিটের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রং চৌধুরী জানান, পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন বিভাগের আওতায় এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলায় তিন জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করায় তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।