জাতীয়

সধবা হয়ে বিধবা ভাতা পান ১৩ জন নারী


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নেত্রকোনার নারান্দিয়া একই ইউনিয়নের ৩৭৮ জন নারী সরকারিভাবে বিধবা ভাতা পান। এদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০ জনের মধ্যে ১৩ জনের স্বামী জীবিত ও বাড়িতে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা উত্তোলন করে আসছেন বিধবা ভাতার টাকা।

জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম খান এবং স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজশে এই অনিয়ম হয়ে আসছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ওই ১৩ জন সধবা নারী নিয়মিত বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুমন মিয়া নামের স্থানীয় এক যুবক জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

স্বামী জীবিত থাকা বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত নারীরা হলেন পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের জাওয়ানী গ্রামের বাসিন্দা এখলাস উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান, হাছেন আলীর স্ত্রী কুলসুমা, আলী নেওয়াজের স্ত্রী জবেদা, জহর উদ্দিনের স্ত্রী রুমেলা, হাসিম উদ্দিনের স্ত্রী হালেমা, আবদুর রহিমের স্ত্রী আছিয়া, সিদ্দিক খানের স্ত্রী রানু বেগম, মরম আলীর স্ত্রী মাহমুদা, ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী হাজেরা আক্তার, বজলুর রহমানের স্ত্রী জমিলা, নইছ উদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা এবং একই ইউনিয়নের ভুগী গ্রামের নবী হোসেনের স্ত্রী জুলেখা ও আবু হোসেনের স্ত্রী নাছিমা।

জেলা প্রশাসক বরাবর করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পূর্বধলা উপজেলায় ৪ হাজার ৫৪৩ জন বিধবা ভাতাভোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলাটির নারান্দিয়া ইউনিয়নে ৩৭৮ জন বিধবা ভাতা পান। এ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিধবা ভাতাভোগী রয়েছেন ৫০ জন। এ ৫০ জনের মধ্যে ১৩ জন নারীর স্বামী বর্তমানে জীবিত আছেন।

এ নিয়ে অভিযোগকারী যুবক সুমন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার এলাকায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরসংসার করছেন। স্বামীও উপার্জনশীল। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম প্রকৃত বিধবাদের ভাতার কার্ড না দিয়ে এসব সধবা নারীকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। আবুল কালাম তার সৌদিপ্রবাসী সহোদর ভাই শহীদ খানকেও প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করেছেন। ঘটনাটি জানার পর আমি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত সধবা নারী জবেদা ও নূরজাহানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেন।
তারা বলেন, ইউপি সদস্য আবুল কালাম দরিদ্র ভাতার কার্ড করে দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গিয়েছিলেন। এ জন্য ওই ইউপি সদস্য তাদের কাছ থেকে কিছু টাকাও নেন বলে জানান তারা। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বিধবা ভাতাভোগী ওই নারীদের কয়েকজনের স্বামীও।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, এই নামগুলো ফখরউদ্দিনের (সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকার) আমলে থেকে হয়ে আসছে। ২০১৪ সালেও হয়েছে। ২০১৮ সালে হয়েছে। আমি এটা করিনি। আমি করে থাকলে আমার স্বাক্ষর থাকত।

নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খোকন মিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এরপর তিনি আর কথা বলতে চাননি।

এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে কার্ডগুলো বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘটনাটি তদন্ত করতে এরই মধ্যে পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান।