চট্টগ্রাম

সর্বত্র শয্যা সংকট, রেল হাসপাতাল রোগীশূন্য


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। স্থান সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতাল। ১৪ মাস আগে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায় চারদিকে নিস্তব্ধতা। চিকিৎসকের উপস্থিতি দূরে থাক, দু’জন স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা পাওয়া গেলেও তাদেরও ব্যস্ততা নেই। হাসপাতালে থাকা শয্যাগুলোও পড়ে আছে রোগী ছাড়াই। কক্ষ আর শয্যার উপর কবে যে ময়লার আস্তর বেঁধেছে, তাও সঠিক নির্ণয় করা কঠিন। তবে সহজেই বুঝা যায় দীর্ঘদিন ধরেই রোগীর পদচারণা নেই তাতে।
অথচ নগরীর অন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একটা শয্যার জন্য এদিক-ওদিক ছুটছে সাধারণ মানুষ। শয্যা না পেয়ে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ার অভিযোগ মিলছে হরহামেশা। তবুও এই মুহূর্তে রোগী পাওয়া যাচ্ছে না কোভিড ডেডিকেটেড এই রেল হাসপাতালে। স্বাস্থ্য বিভাগের দৈনিক হাসপাতালের তথ্যে দেখা যায়, এক বছর ধরেই রোগীশূন্য এটি।
যদিও না পাওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে শুরু থেকেই পানি, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, যন্ত্রপাতি, জনবল, কোভিড চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা কারণে এখানে রোগীদের ভর্তি হতে অনীহা রয়েছে। যার কয়েকটি বিষয় অকপটে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও পানির সমস্যা সমাধানসহ নতুন পরিকল্পনায় হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজানোর কথাও বলেছেন তাঁরা।
এর আগে গত বছরের ২ জুন করোনা উপসর্গের রোগীদের ভর্তির মাধ্যমে সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালটিকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করা হয়। কাগজে-কলমে স্বাস্থ্য বিভাগ তা একশ’ শয্যার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে ৫৬ শয্যা দিয়েই চালু করা হয়। তবুও একদিনের জন্যও হাসপাতালটি অর্ধেক রোগীও পায়নি। করোনা মহামারীর শুরুর দিকে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি না হতে পেরে যে কয়জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাও ধীরে ধীরে রোগীশূন্য শুরু হয়। যদিও হাসপাতালটিকে সচল রাখতে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের জন্য করা হয় কোয়ারেন্টিনও। কিন্তু তাতেও ফল পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়, হাসপাতালটিতে বর্তমানে একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী দিনে-রাতে তিনভাগে ১২ জন কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ গতকাল সরেজমিনে কোন চিকিৎসকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকলেও অলস সময়ই পার করছেন। যে ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করানোর কথা তাতে গিয়ে দেখা যায়, শয্যাগুলো ধুলোবালিতে ভরা। কক্ষের ভেতরে ময়লায় ঠাসা। বাইরে কয়েকটি হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিন বসানো হলেও তাতে পানির সংযোগই নেই। তালা ঝুলছে অন্য কক্ষেও।
রোগীদের পদচারণা বাড়লে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘মানুষজন কম তো, তাই এমন। তাছাড়া রোগী ভর্তি থাকলে কি আর এমন থাকবে? তখন তো বেড-বিছানা সব কিছুই আলাদা আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকবে। এখন কেউই নেই, তাই এমন আছে। চেষ্টা করছি, হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করতে। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটি করে দিতেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পানির সমস্যা সমাধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে ২/৩ দিনের আলোচনায় বসবো।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয় ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালটি যাদের তাদের পক্ষ থেকে কোন কিছুই তারা করে না। এখানে পানির সংকটসহ অনেক কিছুরই সমস্যা। যার কারণে একবার ভেবেও ছিলাম, ব্যাপকভাবে কিছু করব। কিন্তু এসব দেখে আর করা হয়নি। এবার যেহেতু চিন্তাভাবনা হয়েছে, তাই এ নিয়ে কাজ করব। তবে উনাদের তো (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। না হলে তাও সম্ভব হবে না।’
আপাতত ভালোভাবে সচল না করা পর্যন্ত বিদেশ ফেরতদেরই রাখা হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘যারা দেশের বাইরে থেকে আসেন, এদের মধ্যে অনেকেই অর্থের কারণে হোটেল ভাড়া করে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারে না। যার কারণে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করতে হয় আমাদের। তারপর কেউ কেউ কোভিড সার্টিফিকেট ছাড়াই বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন। তাদেরও রাখতে হয়। তাই একটা কোয়ারেন্টিন আমাদের রাখতেই হবে।’
তাছাড়া রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন না উল্লেখ করে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে যারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, বেশিরভাগেরই আইসিইউ-এইচডিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। তাই বলে কি সারাদেশ আইসিইউ বানানো সম্ভব? চট্টগ্রামের যে কয়টি আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে, সবগুলোই রোগীশূন্য পড়ে আছে। আমরা স্থাপন করছি ঠিকই, কিন্তু রোগী আসছে না। বহু আইসোলেশন সেন্টার রোগী না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া কোভিড কবে যাবে, সেটিও কেউ বলতে পারবে না। সব বিষয় বিবেচনা করেই চালু রাখা হয়েছে। মানুষ যদি সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসতো, অন্তত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক কমে আসতো।
তবে সঠিক পরিকল্পনা করলে হাসপাতালটি আরও আধুনিকায়ন করা সম্ভব হবে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালটি রেলওয়ে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধিগ্রহণ করতে হবে। একই সাথে ঢেলে সাজাতে হবে। জেনারেল হাসপাতালের মতো পুরোপুরি কোভিড চিকিৎসায় উপযুক্ত করলে এটি ভবিষ্যতে কাজে আসবে। মোট কথা হচ্ছে, পরিকল্পনা নিয়ে যদি কাজ করা যায়, তাহলে খুবই সুন্দর একটি হাসপাতাল হবে এটি। বর্তমানে যে অবকাঠামো আছে, তাতেই ২৫০ শয্যার করা কঠিন কিছু না। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।’