জাতীয়

সাহায্যে চলে চার প্রতিবন্ধীর জীবন


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

সংসারের হাল ধরতেই অনিচ্ছা থাকা সত্বেও প্রতিবন্ধীতার কারণে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে বাধ্য করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের অলিগলিতে এমনকি ভিআইপি সড়কগুলোতেও মানুষের সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ভ্যান দিয়ে আয়ের পথটি ধরে রেখেছে চার প্রতিবন্ধী।

জীবনের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে পারছে না প্রতিবন্ধীরা। কেউবা অন্ধ হয়ে আবার কেউ-বা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম থেকেই মৃত্যু পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তিকে ধরে রাখতে হয়। সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জন্ম নিয়েও অনেকে আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণে এবং পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় আয়ের পথ হিসাবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিচ্ছে।

নগরীর জাকির হোসেন রোডে আবার কখনওবা জামালখান সড়কে এ চার প্রতিবন্ধীকে দেখা যায়। ভ্যান চালিয়ে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আর্থিক সাহায্যের আকুতি জানায়। মানবিকতার টানে ও এসব প্রতিবন্ধীদের আবেদনে উদারতা দেখান স্বচ্ছলরা। সাহায্যের হাতটুকু বাড়িয়ে সহযোগিতা করেন তাদের পথচলায়।

সাহায্যের এ অর্থ দিয়ে শুধু যে ভরণপোষণ চলছে তা নয়,  ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থাও চালু রেখেছে এ চার প্রতিবন্ধী। সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরের হাঁড় ভেঙ্গে যাওয়ায় বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ভ্যান গাড়িটি পরিচালনা করেন মো. মোজাম্মেল হোসেন। বাকিদের মধ্যে একজন রেল দুর্ঘটনায় একটি হাত ও একটি পা হারিয়েছেন।

এদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কথা বলে পাওয়া গেছে প্রতিবন্ধীতার কারণ। মোজাম্মেল হোসেন তার করুণ কাহিনীর বর্ণনায় জানিয়েছেন, তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরের দক্ষিণ গাঙেরহাটে। ২০০৪ সালের ২৬ নভেম্বর ফটিকছড়ির কাজিরদীঘি এলাকায় সিএনজি টেক্সী উল্টে মোজাম্মেলের পিঠের ওপর পড়ে। এতে তার পায়ের রগ ছিঁড়ে যায়।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নিলেও সুস্থ হওয়ার পর দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কিছুদিন পর তার পায়ে পচন ধরে। এক সময় এ পচনের মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পায়ের হাঁড়গুলো দেখা যেতে শুরু করে। এ কারণে তিনি আর বসতে পারছিলেন না। উপুড় হয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হন। ৩৫ বছর বয়সেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গ্রামের বাড়িতে মা, ভাইবোন ও স্ত্রী এবং দুই মেয়ের জন্য আয়ের এ পথটা বেছে নেন। এ আয় দিয়ে তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অপর একটি মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়রত।

আরেক প্রতিবন্ধী মো. হাসান জানিয়েছেন, ৪৫ বছর বয়সী এ প্রতিবন্ধীর বাড়ি কুতুবদিয়া। ২০০০ সালে চোখে আঘাত লেগে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তিন মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে সংসার করেন তিনি। এক সময় একা একা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আয় রোজগার করলেও প্রতিবন্ধী মোজাম্মেলের ভ্যানেই চেপে বসেন ভোর সকালে।

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ফিরে যেতে হয় ঘরেই। ট্রেন দুর্ঘটনায় একটি হাত ও একটি পা হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন এ যুবক। তার নাম  আনোয়ার হোসেন, বয়স ২৭। ২০১৪ সালের পর থেকে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে হয়েছে। সংসার জীবনে দুই ছেলে নিয়ে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে জীবন। তার এক ছেলে মাদ্রাসা ও অপর ছেলে স্কুলে পড়ছে।

মোজাম্মেলের ভ্যান গাড়িতে থাকা আরেক প্রতিবন্ধীর নাম সুমন। ৩০ বছর বয়স্ক এ প্রতিবন্ধী জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। মা-বাবার সঙ্গে রয়েছে তার পরিবারও। তিন সন্তানের এ জনক ভিক্ষার টাকায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষা চালু রেখেছেন। অন্ন বস্ত্র চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও  শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শেরশাহ বাংলাবাজারের পূর্ব এলাকা থেকেই প্রতিদিন সকালে মোজাম্মেলের ভ্যানগাড়িতে চেপে বসেন আয় রোজগারের উদ্দেশ্যে। অনন্যা আবাসিক এলাকায় সকালে জড়ো হন মোজাম্মেলের ভাড়া বাসায়। প্রতিদিন সকাল থেকে পেটের দায়ে মানুষের সাহায্য নিয়েই চলছে এ চার প্রতিবন্ধী।

গাড়িটি মোজাম্মেলের হলেও এটি দান করে সহযোগিতা করেছেন রতনপুর স্টীল মিল (আরএসএম) কর্তৃপক্ষ। রতনপুর স্টীলের মালিক রহমান সাহেব এ ভ্যান গাড়িটি বিশেষ কায়দায় তৈরি করে দিতে আর্থিক সহায়তা করেছেন বলে জানান মোজাম্মেলন। প্রতিদিনের রোজগারে কমবেশি বলে কিছু নেই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে যে যা কিছু দেন চারজনে ভাগাভাগি করে ঘরে ফিরে যান। একেক দিন একেক এলাকায় ঘুরে বেড়ান সাহায্যের অন্বেষায়।