জাতীয়

স্কিপিং রোপে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়লেন রাসেল


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট সময়ে এক পায়ে সর্বোচ্চ লাফিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল ইসলাম। রাসেল এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডে ১৪৫ বার ও এক মিনিটে ২৫৮ বার দড়ি লাফিয়ে (স্কিপিং করে) এ রেকর্ড গড়েন।

রাসেল ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের সিরাজপাড়া গ্রামে। তার বাবা বজলুর রহমান পেশায় দিনমজুর। আর রাসেল খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষে।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাসেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলাসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছে রাসেলকে দেখতে। রাসেলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অনেকেই আবার ফুল দিয়ে রাসেলকে বরণ করে নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি অনেকেই রাসেলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছেন। আর এতে খুব খুশি রাসেলসহ তার পরিবার।

রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘তার তিন সন্তান, তিনজনই ছেলে। এরমধ্যে রাসেল মেজো। রাসেলের জন্ম ২০০৩ সালে। মথুরাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রাসেল ২০২০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছে শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে।’

তিনি বলেন, ‘মথুরাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১৭ সাল থেকে রাসেল ইসলাম স্কিপিং, ক্রিকেট, ফুটবল, বকসিন, উষু, অ্যাথেলেটিক্সসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে সবথেকে বেশি স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় রাসেল অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় প্রথমে স্কুল পর্যায়ে, এরপর জেলা পর্যায়ে, এরপর বিভাগ ও উপ-অঞ্চল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’

বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে রাসেল ইসলাম অংশগ্রহণ করতে গেলে তাকে আর খেলতে দেওয়া হয়নি। এরপর রাসেল মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে আসে। পরে পরিবার থেকে তাকে উৎসাহ দেওয়া হয় স্কিপিং রোপ খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।’

বিশ্ব রেকর্ড গড়া ১৮ বছর বয়সী রাসেল ইসলাম বলেন, ‘স্কিপিং রোপ জাতীয় প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ার পর থেকেই মনে চাপা কষ্ট নিয়ে ছিলাম। এরপর থেকে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল সেটা হলো আমি বিশ্বরেকর্ড গড়ে দেখিয়ে দিতে চাই। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিনিয়তই ইন্টারনেটে দড়ি লাফের ওপর ভিডিও দেখতাম ও বিশ্ব রেকর্ডে নজর রাখতাম। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন দেখতাম।

তিনি বলেন, ‘সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালের ৭ জুন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ৩০ সেকেন্ডের স্কিপিং রোপ রেকর্ড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করা হয় ও একই বছরের ২৫ জুলাই ১ মিনিটের স্কিপিং রোপ রেকর্ড প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করা হয়। যা ৩০ সেকেন্ডের স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১৪৪ বার ও ১ মিনিটের স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২৫৬ বার।’

রাসেল বলেন, ‘আবেদনের তিন মাস পর গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নির্দেশনাসহ চিঠি মেইলে আসে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এক পায়ে লাফিয়ে (দড়ি দিয়ে) ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ এবং চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এক মিনিটের ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে পাঠানো হয়।’

রাসেল আরও বলেন, ‘যাচাই-বাছাই শেষে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ মেইলে করে জানিয়েছে, স্কিপিং প্রতিযোগিতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের ১৪৪ বারের রেকর্ড ভেঙে আমি করেছি ১৪৫ বার ও ১ মিনিটের ২৫৬ বারের রেকর্ড ভেঙে আমি করেছি ২৫৮ বার। এরপর গিনেস কর্তৃপক্ষ আমাকে সনদপত্র গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে বলেন। এরপর আমি সনদপত্র নেওয়ার জন্য গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে চলতি বছরের ১৬ জুন বাংলাদেশে ডাকবিভাগের মাধ্যমে সনদপত্রগুলো আমার হতে এসে পৌঁছেছে।’

গিনেস বুকে রেকর্ড গড়া রাসেল বলেন, ‘স্কিপিং রোপের অনেকগুলো গিনেস বুকে রেকর্ড রয়েছে, আমি সেসব রেকর্ডগুলো ভেঙে রেকর্ড গড়তে চাই এবং দেশের নাম বিশ্বে উজ্জ্বল করতে চাই। সেজন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’

সালন্দর ডিগ্রি কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক আফজালুর রহমান বলেন, ‘স্কিপিং রোপ খেলায় রাসেলের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছিল সে সফল হবে। কিন্তু সে এত বড় রেকর্ড গড়বে তা মনে হয়নি। রাসেল শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব নয়, সে বাংলাদেশের নাম বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘রাসেল আমাদের গর্ব। স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় সে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। রাসেলের সাফল্য আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। রাসেল যেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা তদারকি করবে।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করা সহজ বিষয় নয়। সে কঠিন কাজটিকে রাসেল ইসলাম সহজ করে ফেলে গিনেস বুকে রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে। রাসেলের এই কৃতিত্ব ঠাকুরগাঁওসহ দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। রাসেলের এই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।’

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল ইসলামের গিনেস বুকে ৩০ সেকেন্ডে করা ওয়ার্ল্ড রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ন থাকলেও ১ মিনিটে করা রেকর্ডটি গত ১০ এপ্রিল ভারতের লক্ষৌণর এক তরুণ ভেঙে ফেলেছেন। ভারতীয় ওই তরুণ এক মিনিটে ২৫৮ বারের জায়গায় ২৫৯ বার লাফিয়ে রেকর্ড গড়েছে।