জাতীয়

১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে শিথিল হবে লকডাউন


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দেশে চলমান লকডাউনের সময়সীমা আরো পাঁচ দিন বাড়িয়ে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপর ধাপে ধাপে শিথিল হবে লকডাউন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী ১১ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে দোকানপাট এবং সীমিত আকারে গণপরিবহন খোলারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যথারীতি বন্ধই থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে ১২ জন মন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সরাসরি ও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।

গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যানবাহন যেন বাইরোটেশন (পর্যায়ক্রমে) চলে। শ্রমিক নেতা, পরিবহন নেতা ও মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় প্রশাসন।’ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী আরো জানান, এ সবই সাময়িক সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতি অনুযায়ী যেকোনো সময় এসব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে আজ বুধবার জারি হতে পারে নতুন প্রজ্ঞাপন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক আরো বলেন, ‘টিকা না নিয়ে কেউ দোকান খুলতে পারবেন না বা বাইরে বেরোতে পারবেন না। ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা টিকা না নিয়ে বাইরে চলাফেরা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’

বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সরকারের হাতে এখন প্রায় সোয়া কোটি টিকা আছে। এ ছাড়া এ মাসে আরো প্রায় এক কোটি টিকা আসবে। আর চীনের সঙ্গে মিলে স্থানীয়ভাবেও টিকা উৎপাদনের কাজ এগিয়ে চলছে। ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে টিকার ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালানো হবে, সেখানে শ্রমজীবী মানুষকে টিকা নিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’

এদিকে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে প্রচলিত আইন না মানলে সরকার প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে আরো শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে আগ্রহী করতে প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে গতকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন, শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা সম্ভব না। এ জন্য সবাইকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সেই মোটিভেশনের জন্য গ্রামে গ্রামে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করা হবে। জনপ্রতিনিধিরা সেসব সভায় অংশ নেবেন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ ব্যাপক আকারে টিকা কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে পর্যায়ক্রমে যানবাহনও চলবে। তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না।’ মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগামী এক সপ্তাহে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেবে। প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পেছনে মানুষকে কষ্ট করে দৌড়াতে হবে না।

প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে একসঙ্গে সপ্তাহজুড়ে টিকা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্ক, শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেল্পারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার এলাকা থেকে টিকা নিতে হবে। দোকানপাট খোলার আগে ৭ থেকে ৯ আগস্ট তিন দিন সুযোগ রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন নিতে পারে সেই সুযোগ দিচ্ছি।’

গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে জরুরি সেবার বাইরে সব ধরনের শিল্প, কলকারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় গত ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প, কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে পড়তে হয় দুর্ভোগে। এ পরিস্থিতিতে এক দিনের জন্য বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এরপর আবার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রপ্তানিমুখী শিল্প, কলকারখানা খোলা হলেও এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবীরা বাসা থেকে কিভাবে তাঁদের কর্মস্থলে যাতায়াত করবেন সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে টানা ১৪ দিনের লকডাউনের মধ্যে গত তিন দিনে ঢাকায় ছোট গাড়ি চলাচল অনেকটাই বেড়ে গেছে। রপ্তানিমুখী কলকারখানার কাজের সঙ্গে যুক্ত অন্য (লিংকেজ) প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অফিস করতে গিয়ে যাতায়াত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি কার্যকর করতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে যারা মাস্ক পরবে না, তাদের জরিমানা করতে পারে। এ জন্য অধ্যাদেশ লাগবে। আলোচনা হয়েছে, আমরা সেদিকেও যাব।’