মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে চলমান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ঘর পেলো ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার।
দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ পরিবারকে তালিকাভূক্ত করেছে শেখ হাসিনা সরকার। ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একইসঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এটিই বিশ্বে গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে যাদের ভূমি নেই তাদের সরকারের খাস জমি থেকে দুই শতাংশ ভিটে এবং ঘর দিচ্ছে সরকার। যাদের ভিটে আছে ঘর নেই তাদের ঘর দিচ্ছে সরকার।
প্রতিটি ঘর দুই কক্ষ বিশিষ্ট। এতে দুটি রুম ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর এবং একটি খোলা জায়গা থাকবে। পুরো ঘরটি নির্মাণের জন্য খরচ হবে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং মালামাল পরিবহনের জন্য চার হাজার টাকা দেওয়া হবে প্রতি পরিবারকে।
সরেজমিনে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইশ্বরিপুর ইউনিয়নের স্বামী পরিত্যক্তা মর্জিনা বেগম বলেন, এক মেয়ে নিয়ে বাঁশের কঞ্চির বেড়ার ঝুপড়িতে থাকি। দিন মজুর খেটে কোনো রকমে জীবন চলছে। নিজের একটা ঘর হবে কোনোদিন ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রীকে দোয়া করি। তিনি আমাদের ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদরের দিনমজুর অরবিন্দ গাইন বলেন, আগে সরকারি খাস জমিতে খড়ের চালার ঘরে থাকতাম। নিজের ঠিকানা ছিল না। শেখের বেটি আমাদের ঘর ও জমি দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সারা দুনিয়াতে এটি প্রথম ঘটনা এবং একমাত্র ঘটনা একসঙ্গে বিনে পয়সায় এত ঘর করে দেওয়া। মাদার অব হিউম্যানিটি সারা দুনিয়াতে একটি নজির স্থাপন করলেন।
২৩ জানুয়ারি প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর দেওয়ার পর থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে আরো এক লাখ ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান মাহবুব হোসনে।
সারা বাংলাদেশে ঘরও নেই, জমিও নেই এমন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১। ভিটেমাটি আছে, ঘর জরাজীর্ণ কিংবা ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে যে তালিকা করা হয়েছে সব মিলিয়ে সেই তালিকায় আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবার রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস অবধি তিন লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্ন অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ।
এর আগে গত ২৩ জুলাই কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রায়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত ৫ তলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। খুরুশকুল প্রকল্পের সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার।
খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।