আন্তর্জাতিক

অত্যাধুনিক জিন প্রযুক্তির চিকিৎসায় ক্যান্সারমুক্ত কিশোরী


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

অত্যাধুনিক সেল ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা প্রথমবারের মতো নিরাময় অযোগ্য রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া রোগ সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তা রোগীর দেহের ক্যান্সার সেলগুলোকে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব কোষ ক্যান্সার সেলগুলোকে টার্গেট করে আক্রমণ চালায় এবং ভালো কোষের ক্ষতি না করেই তা নির্মূল করে।

এলিসা নামে এক কিশোরীর দেহে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে তার শরীর থেকে ক্যান্সার দূর করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে তার দেহে লিউকেমিয়ার প্রচলিত সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছিল।

পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ওষুধটি প্রয়োগের পর এলিসার দেহে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। এলিসা এখন ক্যান্সার থেকে মুক্ত। এলিসার বয়স মাত্র ১৩। সবশেষ পরীক্ষায় তার দেহে ক্যান্সারের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এলিসার দেহে জিনগত পরিবর্তনের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তা নানা রোগের চিকিৎসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এই পদ্ধতির নাম ‘বেস এডিটিং।’ গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই পদ্ধতিতেই এলিসাকে লিউকেমিয়া থেকে সারিয়ে তুলেছেন।

ওষুধ প্রয়োগের ছয় মাস পরে দেখা গেছে এলিসার শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে রোগটি আবারও ফিরে আসে কি না এই আশঙ্কায় তাকে এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরের মেয়ে এলিসা। গত বছরের মে মাসে তার দেহে টি-সেল একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। টি-সেল হচ্ছে শরীরের অভিভাবকের মতো। এই সেল শরীরের ভেতরে হুমকি সৃষ্টিকারী উপাদান ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এলিসার দেহে ক্যান্সার সেলগুলো বিপদজনক হয়ে উঠেছিল এবং চলে গিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেমোথেরাপি এবং বোন-মেরো ট্রান্সপ্লান্ট করেও সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছিল না।

এলিসার মা কিওনা বলেন, গত বছর তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি হয়তো তার মেয়ের সঙ্গে শেষ ক্রিসমাস পালন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এর পরে যা ঘটেছে কয়েক বছর আগেও তার সবই ছিল অচিন্তনীয়। জেনেটিকসের অসাধারণ অগ্রগতির কারণেই এলিসার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকরা যে বেস এডিটিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন সেটি মাত্র ছয় বছর আগে উদ্ভাবন করা হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক কোডের একটি বিশেষ অংশকে আকারে বড় করেন এবং পরে এর মলিকুলার বা আণবিক গঠনে পরিবর্তন আনেন। এভাবে এর জেনেটিক নির্দেশনা বদলে দেওয়া হয়। একজন দাতার কাছ থেকে সুস্থ টি-সেল নিয়ে তাতে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলো এলিসার শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যা তার দেহের ক্যান্সার সেলগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি সফল হলে দ্বিতীয় বোন-মেরো প্রতিস্থাপনের পর এলিসার দেহের টি-সেলসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনর্গঠিত হবে।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের অধ্যাপক ওয়াসিম কাসিম। তিনি বলেন, ‘এলিসাই প্রথম রোগী যাকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়েছে।’

চিকিৎসার জন্য এলিসা হাসপাতালে ছিল ১৬ সপ্তাহ। তিন মাস পর তার দেহে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ দেখা গেলেও সবশেষ দুটো পরীক্ষায় সেগুলো দেখা যায় নি। এলিসা ছাড়াও আরো নয় জন রোগীর ওপর এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা পরীক্ষা চালানো হবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা