প্রধান পাতা

অনলাইনে মেয়েদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁদ পেতে ৪০ কোটি টাকা লুট!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )


নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিন। দুই জনের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট। বড় মাপের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেই সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে তাদের আরো একটি ‘ব্যবসা’ রয়েছে যার নাম হুন্ডি ব্যবসা। এই পরিচয়টা জানত কেবল নির্ধারিত কিছু মানুষ, যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করত। তবে হুন্ডি আর স্বর্ণ ব্যবসা করতে গিয়ে গত দুই বছর ধরে তারা শুরু করে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবসা (ভিপিএন) ব্যবসা। এই সময় অনলাইনে মেয়েদের সঙ্গে আড্ডার লোভ দেখিয়ে দেশে ও বিদেশে বসবাসকারী অসংখ্য তরুণ-যুবকের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে ৪০ কোটির বেশি টাকা। সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই জানিয়েছে নিধু ও ফরিদ। সিআইডি পুলিশ সম্প্রতি তাদের সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল হাসান।

সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, স্ট্রিমকার একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম যা বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়। এই প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধজনক কার্যক্রম পরিচালিত হবার তথ্যের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ সেন্টার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫টি ব্যাংক একাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পায় সাইবার সেন্টার। এ ঘটনায় গত ১৯ মে এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালিয়ে সাভার এলাকা থেকে চার জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় সাভার থানায় মামলা হয়। পরে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতেই গ্রেফতার করা হয় নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিনকে ।

তিনি আরো বলেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে এদেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে বিশেষ চক্র এক ধরনের অপরাধজনক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে তরুণীদের হোস্টিং করিয়ে বিভিন্ন উপায় অর্থ উপার্জন করা হতো। এদের টার্গেট মূলত যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য বিন্স নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় তাদের। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল হাসান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা স্ট্রিম অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে এ কার্যক্রম পরিচালনায় বিন্স ও জেমস নামের দুটি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে এই লাইভ ভিডিও ও চ্যাট অ্যাপে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার লোভ দেখিয়ে লোকজনকে টেনে নিয়ে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ফেলত। তারা ১ লাখ বিন্স ১ হাজার ২০ টাকায় এবং ১ লাখ জেমস ৬০০ টাকায় বিক্রি করত। এই টাকা সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন এমএফএস এবং ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এই এজেন্সিগুলো তা কিনে আনে বিদেশি অ্যাপের অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এরকম স্ট্রিমকারের অনেক এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্টে গত এক বছরে ৪০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেফতারের সময় নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে লেনদেনের ব্যবহূত ব্যাংক চেক বই, ডেভিড কার্ড, বিকাশ একাউন্ট নম্বর ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল হাসান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।