জাতীয়

অর্থনীতি ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সাফল্যে জাতিসংঘে বিজয়ের মুখে বাংলাদেশ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

বাংলাদেশ ১৯৭১ সাল অবধি অবিভক্ত পাকিস্তানের অংশ ছিল। বর্তমানে দেশটি পাকিস্তানের পুরো বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। পাকিস্তান যেখানে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য পরিচিত সেখানে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের সংস্থাগুলো তাদের দেশকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেবে না বলে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সম্মানজনক অবস্থান করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন ৭৬তম অধিবেশনের জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক বছর মেয়াদী এই ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশের এই অংশগ্রহণ শুধুমাত্র দেশটির ক্রমবর্ধনশীল অর্থনৈতিক আকারকেই নির্দেশ করছে না, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টারও স্বাক্ষ্য দিচ্ছে।

বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ জেঁকে বসেছিল। তবে ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে নিরলস অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি হেফাজত-ই-ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এখনো সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থীদের সঙ্গে তাল তাল মিলিয়ে চলছে।

আমস্টারডামভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সাম্প্রতিক মতামত লেখায় বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের নির্ভিকভাবে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার নৈতিক দৃঢ়তা এবং কর্তৃত্বের অভাব রয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার সততা তাকে যথেষ্ট কার্যকারিতাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে।’

বেশিরভাগ সময়ই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছেন। তার এ দৃঢ়তা শুধুমাত্র যখন তিনি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন তখনই দেখা যায়নি, বরং ‘মানহাজি’র মতো ছোট দলগুলোর বিরুদ্ধেও তিনি একইরকম কঠোরতা দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মানহাজিতে ‘আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া’ কিছু সদস্যও রয়েছে। বিষয়টি ৮০ দশকের শুরুর দিকের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন সোভিয়েতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশ কিছু বাংলাদেশি আল-কায়েদায় যোগ দেয়ার জন্য আফগানিস্তানে গিয়েছিল। পরবর্তীতে এদের অনেকেই আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালে হুজির একটি শাখা বাংলাদেশে অবস্থান নিলে এ দলটির বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকার এলইটি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী দলগুলোকেও নিশানা করেছিল।

কয়েক বছর আগে হোলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারী ও উস্কানীদাতাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজমের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার পর থেকে আগ্রাসী জঙ্গিবাদ বিরোধি অভিযানে ৭৯ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন এবং আরো ১৫০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নিজেদের মাটিকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার না করতে দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা বিপুল পরিমান রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের আলামত রয়েছে কিনা তা জানতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের এই প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ব্যাতিক্রমী সব সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন যারমধ্যে বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরে তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ অন্যতম। এই আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো পুর্নবাসন কাজ চলছে।

হাসিনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘দ্রুত’ কৌশল গ্রহণই ছিল এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাস-বিরোধী আইন প্রণয়ন করে, যা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। এ ছাড়া সন্ত্রাস দমনের জন্য ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন অ্যাক্টও প্রণয়ন করে।

বাংলাদেশ সরকার হারকাত-উল জিহাদ বাংলাদেশ, আনসার-উল-বাংলা টিম এবং জামাত-উল-মোজাহিদিন বাংলাদেশের মতো অভ্যন্তরীণদলসহ মোট ছয়টি দল নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া সীমান্ত সন্ত্রাস ইস্যু মোকাবিলার জন্য ভারতেরও সঙ্গেও নির্বিঘ্নে কাজ করছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদ সমূলে উৎপাটনে প্রতিশ্রুতিদ্ধ ঢাকা।

সূত্র: ইকোনমিক টাইমস