খেলা

অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম নিজ জেলার ক্রিকেটে আজীবন বহিষ্কৃত কেন?


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

টি-টোয়েন্টি ফরমেটে প্রথম জয়ের পর প্রশংসায় ভাসছেন অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম। প্রশংসায় পঞ্চমমুখ সুনামগঞ্জ জেলা ও সিলেট বিভাগের ক্রিকেট ও সমগ্র বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

অথচ সেই নাসুমই ২০১৫ সালে সুনামগঞ্জ ক্রিকেট লিগে আজীবন বহিষ্কৃত হন। তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সুনামগঞ্জ জেলা থেকে নাসুম আহমেদই প্রথম ক্রিকেটার যিনি জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি বীরত্বপূর্ণ খেলা দেখিয়ে জেলার মুখ উজ্জল করেছেন।

অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম যখন সবার মুখে মুখে ঠিক তখনই উঠে আসে তাকে আজীবন বহিষ্কারের কথা। কেন জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাকে বহিষ্কারের কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। জেলা ক্রীড়া সংস্থা কি পারতেন না এত বড় কঠিন সিদ্ধান্ত না নিতে?। এ নিয়ে সুনামগঞ্জে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ আর আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ২০০৯-১০ সালে কিশোর বয়সে সুনামগঞ্জের প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক হওয়া নাসুম আহমদের বাড়ি জেলার দিরাই উপজেলার মধুরাপুর গ্রামে। তার বাবা আক্কাস আলী একজন কৃষক। তবে দীর্ঘ দিন ধরেই সপরিবারে সিলেট বসবাস করছেন।

জেলার সচেতন মহল বলছেন, ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌছার জন্য সে সিলেট জেলার হয়ে খেলে। নাসুম আজ সুনামগঞ্জ সিলেট পেরিয়ে পুরো দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে, তার সাফল্যে গর্বিত। কারণ সে এখন সুনামগঞ্জের ছেলে হয়ে জাতীয় দলে খেলেছে, তার কাছ থেকে নতুন খেলোয়াড়রা অনেক কিছুই শিখতে পারবে। তাই তার বহিষ্কার আদেশ তুলে দেওয়া উচিত। অবিলম্বে তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে লজ্জা থেকে মুক্তির দাবি জেলাবাসীর।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, নাসুম আহমদ প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে আসে এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ক্রিকেট চর্চা শুরু করে। ক্রিকেট খেলায় তার একটি আলাদা টান ছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ক্লাবে নিয়মিত খেলে। পরে সে বয়সভিত্তিক সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলেন। অনুর্ধ্ব ১৪, ১৬ ও ১৮ প্রতিযোগিতায় সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়। জাতীয় চ্যাস্পিয়নশিপেও সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়।

২০১৩ সালে সুনামগঞ্জ প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। এ বছরই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সুনামগঞ্জ জেলা দলে তাকে ডাকা হয়। কিন্তু সে কোনো সাড়া দেয়নি এবং সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়।

পরবর্তীতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট বিভাগের সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সে তার কোনো জবাব না দিলে তাকে সুনামগঞ্জের লীগে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। সেই সময় এবং সেই বৈঠকে প্রতিবাদ করেছিলেন প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ সালের ক্রিকেট লীগে সে প্যারামাউন্ট ক্লাবের পক্ষে অংশ নিতে আসলে নিষেধাজ্ঞাদেশের কারণে তাকে খেলতে দেওয়া হয়নি। সে এ বিষয়ে কখনোই জেলা ক্রীড়া সংস্থায় কোনো আবেদনও করেনি।

প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজীবনের জন্য যখন তাকে নিষিদ্ধ করে সেই সময় এবং সেই বৈঠকে আমি নিজে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই ছেলে আজ সারা বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করেছে।’

জেলাভিত্তিক খেলায় আমাদের এখানে শর্ত আছে যে জেলার খেলোয়াড় সে নিজের জেলার হয়ে খেলবে হবে বলে জানান প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের কর্মকর্তা ওয়াসিম বখত। তিনি বলেন, ‘সেই সুবাদে নাসুমকেও আমরা জেলাভিত্তিক দলে ডাকলে সে সুনামগঞ্জের হয়ে খেলতে চায়নি। পরে তাকে চিঠি দেওয়া হলে সেটারও উত্তর দেয়নি এবং আমাদের কারও সাথে যোগাযোগ করেনি। পরবর্তীতে জেলা ক্রীড়া তাকে বহিষ্কার করে এবং পরবর্তী চিঠির কোনো জবাব না দেওয়ায় তাকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সে সময় সুনামগঞ্জের হয়ে না খেলে সিলেট জেলার হয়ে খেলা শুরু করে। এজন্য তৎকালীন ওই কমিটি নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে তাকে আজীবন বহিষ্কার করে। তবে আগামী মিটিংয়ে আমরা বৈঠক করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব এবং তাকে আবারও সুনামগঞ্জে মাঠে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হবে।’