জাতীয়

আড়াই টাকা অনিয়মের মামলা চলছে ৪০ বছর!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
  • বিচারিক আদালতে খালাস পেয়েও ফিরে পাননি চাকরি
  • বিভিন্ন দপ্তর ও পরিদপ্তরের আশ্বাসেই পার ৩০ বছর
  • এই মামলা রিভিউ পর্যন্ত নিয়ে আসায় হতবাক আইনজীবীরা

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন। বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। চাকরি করতেন কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে। চাকরিতে যোগ দেন ১৯৭৪ সালে। কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে একাধিকবার পুরস্কারও পান তিনি। তবে বিপত্তি ঘটে ১৯৮১ সালে। চাকরিতে থাকা সময়েই পাঁচ প্যাকেট পাটের বীজ বিক্রিতে আড়াই টাকা বেশি নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুলের নামে মামলাও ঠুকে দেন। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন চলছিল। ১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আড়াই টাকা অনিয়মের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করে বিচারিক আদালত। সেই সাথে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ওই আদেশের পর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। কারাগার থেকে মুক্তি ও মামলা থেকে খালাস পেয়ে ওবায়দুল চাকরি ফিরে পেতে বহু তদবির করেন। এছাড়া কাগজপত্র নিয়ে নানা দপ্তরে ঘুরাঘুরি করেও কোনো লাভ হয়নি। তার চাকরি আর ফিরে পাননি। চাকরিতে বহালের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তর ও পরিদপ্তরের আশ্বাসেই পার হয়ে যায় ৩০ বছর। উপায়ান্তর না পেয়ে প্রতিকার চেয়ে অবশেষে দ্বারস্থ হন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ওবায়দুল। পরের বছরই ওই মামলার শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুলের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের দেয়া রুলের চার বছরেও জবাব দেয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

পরে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই ব্যক্তিকে তার উপযুক্ত বা প্রকৃত পদে বহাল করে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনামলের পাটের বীজ বিক্রিতে আড়াই টাকা অনিয়মের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে তাকে (বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন) দুই মাসের দণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টে তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসিমা আক্তার চৌধুরী। পরে ২০১৮ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। ফলে ওই ব্যক্তিকে তার (পাট সমপ্রসারণ সহকারী হিসেবে) উপযুক্ত বা প্রকৃত পদে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ আপিলেও বহাল থাকে। তবে ১৯৮২ সালের দেয়া দুই মাসের দণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অবৈধ করে দেয়া রায় আংশিক সংশোধন করা হয়। ছাড় দেয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও। আপিল বিভাগের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই রিভিউ আবেদনের ওপর গত ২৪ জুন শুনানি শেষ করা হয়েছে, এখন আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের ছেলে মো. সোহেল। দীর্ঘ ৪০ বছর আগে আড়াই টাকা অনিয়মের ঘটনায় এখন শুধু আপিল বিভাগের রিভিউতে আদালতের আদেশের অপেক্ষা।

গত ২৪ জুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আজ সোমবার  আদেশ দেয়ার জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন। আদালতে ওই দিন কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন প্রবীর নিয়োগী।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, ‘একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই মামলায় রিভিউ পর্যন্ত নিয়ে আসবে এটা সত্যিই বিস্ময়কর। তবে আমি আশাবাদী, রিভিউয়ের রায়ও ওবায়দুলের পক্ষে থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল আমার সংবাদকে বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হয়তো কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে এই মামলাটি পরিচালনা করছে। তা না হলে এমন একটা লঘু দণ্ডের মামলা রিভিউ পর্যন্ত আসতে পারে না। উচ্চ আদালতে এই দপ্তরের অনেক মামলা চলমান আছে। তবে এই মামলাটি কী কারণে রিভিউ পর্যন্ত এলো এটা আমার বোধগম্য নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আসলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে নানান অভিযোগের কারণে প্রতীকী শাস্তি দেয়া হয়। সেটা সাধারণত লঘু দণ্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই লোকের ক্ষেত্রে লঘু দণ্ডের পরিবর্তে গুরুদণ্ড দেয়া হয়েছে।’