জাতীয়

এমপির বাড়িতে খাদ্য কর্মকর্তাকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নাটোরের লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটক রেখে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে। গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

এ সময় জোর করে দলিলে ৮ লাখ টাকা পাওয়ার উল্লেখ করে সই নেওয়া হয় বলে রফিকুল ইসলামের নামের ওই সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় তিনি লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম।

লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান জানান, ঘটনাটি বাগাতিপাড়া উপজেলা এলাকার। তাই বাদীকে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় রাসেল আহমেদ (৩৮) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৭) নামের রোকনের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে বলে ডিবি পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। রাসেল লালপুর উপজেলার নেংগপাড়া গ্রামের হাসান মন্ডলের ছেলে এবং আবুল কালাম বিজয়পুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।

লালপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল সমর্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপির ঠিকাদারী ব্যবসার পার্টনার রোকনুজ্জামান রোকন ফোন করে তাকে এমপির বাড়িতে যেতে বলেন। রোকনের ফোন পেয়ে তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলায় এমপির বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুজ্জামান রোকন এবং তার দুই সহযোগী রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম তাকে এমপির বসার ঘরে নিয়ে যান। এ সময় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং খাদ্যগুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চলে যান।

এমপি বকুল চলে যাওয়ার পর পরই রোকনুজ্জামান রোকনসহ তার সহযোগীরা তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে বসেন। এ সময় তারা তাকে বলেন, খাদ্যগুদাম কর্মকতার পদ অনেক লাভজনক। এক বছর ধরে আছেন অথচ আমাদের সঙ্গে একদিনও দেখা করেননি। দলীয় কাজে তাদের ২০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতনসহ কিল-ঘুষি। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ওই ঘরে বসিয়ে রাখা হয় তাকে।

তিনি জানান, একপর্যায়ে রাসেল তার কাছে ৮ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করে বসেন। টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে নইলে ছাড়া হবে না এমন হুমকি দিতে থাকেন। একই সঙ্গে চলতে থাকে কিল-ঘুষিও। পরে তারা ঘর থেকে বের করে রাস্তায় এগিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের দাবিকৃত পাওনা বাবদ ৮ লাখ টাকার জন্য দলিলে তার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেন। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুজ্জামান রোকনের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বাগাতিপাড়া থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আমার বাসায় বা বৈঠকখানায় কাউকে মারধর বা আটকে রাখার কোনো ঘটনায় ঘটেনি। ঘটনাটি সাজানো বলে মনে হয়। লালপুর উপজেলা গুদাম খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই তার প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছিলেন। খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে- সে বিষয়ে তিনি আমার সহায়তার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলে চলে যাই। তাকে কেউ ডেকে আনেননি, আমার বাড়িতে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার বিষয়টিও সঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এমন নাটক সাজাতে গুদাম খাদ্য কর্মকর্তাকে বাসায় পাঠিয়েছিল। ওই কর্মকর্তাও আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন। তিনি সেটি না করে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।

তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান সাংসদ বকুল।