আন্তর্জাতিক

করোনায় ভারতে অনাথ হাজারো শিশু


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দুদিনের ব্যবধানে মা-বাবাকে হারিয়েছে প্রথম ও আয়ুস। প্রথমের বয়স ৫ বছর আর আয়ুসের বয়স ১০ মাস। তারা দুই ভাই। গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তাদের মা-বাবা মারা যান। প্রথম বোঝে না, মা-বাবা কেন আসছেন না। জানতে চায়, মা-বাবা কোথায়? দুই শিশুর দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন স্বজনেরা। তাঁরা যোগাযোগ করেছেন দিল্লিভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে। শিশু দুটিকে দত্তক দেওয়ার কাজে এনজিওটি সহায়তা করবে। বিবিসির খবর।

প্রথম আর আয়ুসের মতোই হতভাগ্য আরও দুই শিশু সোনিয়া আর অমিত। সোনিয়ার বয়স ১২ বছর। অমিতের ৭। গত বছরের জুনে করোনার সংক্রমণে দুই ভাইবোন হারায় বাবাকে। এ বছরের এপ্রিলে হারায় মাকে। এখন তারা আছে দাদির কাছে। তিনি নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর অবর্তমানে কে দেখবে এই দুই শিশুকে?

শুধু এই শিশুরা নয়; করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভারতে অনেক শিশুই অনাথ হয়েছে। নারী ও শিশুকল্যাণ–বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সম্প্রতি এক টুইটে জানান, করোনার সংক্রমণের কারণে গত ১ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৫৭৭ শিশু অনাথ হয়ে গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রত্যেক অনাথ শিশুর জন্য ১৩ হাজার ৯৭০ ডলারের আর্থিক তহবিল ঘোষণা করেছেন। ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সীদের বৃত্তি হিসেবে এ সহায়তা দেওয়া হবে। এর আগে সরকারি স্কুলে তারা পড়াশোনা করবে।

ভারতে দত্তক গ্রহণের হার খুবই কম

ভারতে দত্তক আইন বেশ কঠোর। প্রতিটি রাজ্যে শিশু সুরক্ষা ও কল্যাণ কমিশন রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি জেলায় কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। দত্তক নেওয়ার পরে এই কর্মকর্তারা শিশুদের খোঁজখবর রাখেন। এ ছাড়া নানা এনজিও দত্তক নেওয়া শিশুদের বিষয়ে কমিশনকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।

ভারতে সরকারি পোর্টালে শিশুকে দত্তক নিতে আগ্রহী ব্যক্তিরা নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন। সব ধরনের প্রয়োজনীয় যাচাই–বাছাই ও কমিশন থেকে কোনো শিশুকে ‘আইনত দত্তক গ্রহণের উপযুক্ত’ ঘোষণার পরই তাকে দত্তক দেওয়া হয়।

তবে ভারতে দত্তক নেওয়ার হার খুবই কম। ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে মাত্র ৩ হাজার ৩৫১ জনকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। দেশটিতে হাজারো শিশু অনাথ হচ্ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে ৬৬ হাজারের বেশি শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়েছে।

দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপারসন অনুরাগ কুণ্ডু বিবিসিকে বলেন, ভারতে করোনার সংক্রমণের পর অনাথ শিশুদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ১৮ বছরের কম বয়সী অনেক শিশু অনাথ হয়েছে। এটি একধরনের জাতীয় সংকট।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ। রাজ্যের শিশুকল্যাণ কমিশনের সদস্য প্রীতি ভার্মা বলেন, এখানে ১ হাজারের বেশি শিশু কোভিড-১৯–এর কারণে অনাথ হয়েছে। কমিশন থেকে তাদের খুঁজে বের করতে সাহায্যের জন্য পুলিশ কনস্টেবল, গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাকর্মী এবং গ্রামপ্রধানদের তালিকা করা হয়েছে।

পাচারের আতঙ্ক

বিশ্বে করোনায় বিপর্যস্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন ও ওষুধ সহায়তা চেয়ে পোস্ট দেওয়া হয়। শিশুদের দত্তক নিতে আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন পেজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলা হচ্ছে। সেখানে শিশুদের ছবি ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকে। খারাপ উদ্দেশ্যে এসব মাধ্যম ব্যবহারের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কুণ্ডু এ বিষয়ে সতর্ক হতে পরামর্শ দিয়েছেন।

তদন্তের জন্য ফেসবুকের এমন একটি পেজের নম্বরে ফোন করেন কমিশনের একজন সদস্য। বিপরীত পাশ থেকে শিশুর জন্য সাত হাজার ডলার দাবি করা হয়। কমিশন বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে।

দিল্লিভিত্তিক এনজিও প্রস্থানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোনাল কাপুর বিবিসিকে বলেন, ভয় হচ্ছে এসব শিশুকে শ্রমিক বা যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।

করোনায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করার তথ্য রয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানের কাছে। শুধু অনাথ নয়, মা বা বাবার মধ্যে যেকোনো একজন মারা গেছেন, এমন শিশুদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এনজিওটি। সোনাল বলেন, একটি পরিবারে করোনায় সংক্রমিত হয়ে একজন মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় বাবা তাঁর মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছেন।

রাজ্য সরকার অনাথ শিশুদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ নিয়ে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে।