লাইফ স্টাইল

করোনা পরবর্তী বেড়েছে বিচ্ছেদ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে ডিভোর্সের হার বেড়ে গেছে। গড়ে দৈনিক ১৫টি বিয়ে ভাঙছে। এক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ১১ কারণে ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে মেয়েরা ৬টি কারণে এবং ছেলেরা ৫টি কারণে ডিভোর্স চাইছে।

ডিভোর্সের যত কারণ : চসিকের সালিশী পরিষদে দাখিল হওয়া ২৫টি ডিভোর্স আবেদন ঘেঁটে নানা কারণ দেখা গেছে। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে দেওয়া ডিভোর্সের কারণের মধ্যে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মাদকাসক্ত, শারীরিক অক্ষমতা, পর নারীতে আসক্ত, গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে, ভরণ পোষণ না দেওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেওয়া ডিভোর্সের কারণের মধ্যে স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়া, স্ত্রীর বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ও পরকীয়া, স্ত্রীর বেপরোয়া ও উচ্ছৃখল জীবন যাপন, সন্দেহ প্রবণতা, ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি উল্লেখ আছে।

এগিয়ে নারীরা : গত ৮ ডিসেম্বর চসিকের সালিশী পরিষদে ২৫টি ডিভোর্স আবেদন শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিল। সরেজমিনে গিয়ে ২৫টি ডিভোর্স আবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২৫টির মধ্যে ১৫টিতেই স্ত্রী  এবং ১০টিতে স্বামী ডিভোর্স দিয়েছে।  বিয়ের মতো মধুর বিষয়টি অনেকের কাছে এখন বিষাদময় হয়ে উঠছে।

সংসারের মায়া, স্বামী-স্ত্রীর সান্নিধ্য, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা, দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন, মধুর সম্পর্কের স্মৃতি কোন কিছুই বিবাহ বিচ্ছেদকে আটকাতে পারছে না। এক সময় দেখা যেতো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ত হলেও নিষ্পাপ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামী বা স্ত্রী দু’জনই বিয়ের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখত। কিন্তু সেসব দিন এখন আর নেই। এখন কথায় কথায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। করোনা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ডিভোর্সের আবেদন জমা পড়েছে ৫১৭৪টি। সে হিসেবে সিটি কর্পোরেশনে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি করে ডিভোর্সের আবেদন পড়ছে অর্থাৎ প্রতি দেড় ঘণ্টায় ১টি ডিভোর্স হচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে ডিভোর্সের আবেদন জমা পড়েছিল যথাক্রমে ৪৫৫০ ও ৪৮৫৩টি। আবার ডিভোর্সের জন্য যত আবেদন পড়ে তম্মধ্যে প্রত্যাহার হয় খুবই সামান্য।

২০১৯ সালে দাখিলকৃত ৪৫৫০টি ডিভোর্সের আবেদনের মধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে ৯৭টি। ২০২০ সালে ৪৮৫৩টি আবেদনের মধ্যে ৯৩টি প্রত্যাহার হলেও ২০২১ সালের ৫১৭৪টি আবেদনের মধ্যে ১১৯টি প্রত্যাহার হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনে দাখিল হওয়া এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সময়ের সাথে সাথে ডিভোর্সের সংখ্যাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুসারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডিভোর্সের হার ছিল প্রতিদিন গড়ে ১২টি যা ২০২০ সালে বেড়ে হয় ১৩টি। চলতি বছর ডিভোর্সের গড় হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫টি। কাগজে কলমে ডিভোর্সের হিসাবটি এই রকম হলেও বাস্তবে বিবাহ বিচ্ছেদের হার তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ নি¤œ মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবীসহ অনেক পরিবার রয়েছে যাদের ডিভোর্স স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে ঘটছে। এসব বিবাহ বিচ্ছেদের হিসাব সিটি কর্পোরেশনে বা অন্য কোথাও দালিলিকভাবে লিপিবদ্ধ থাকে না।

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, বিচ্ছেদের এই সংখ্যাই বলে দিচ্ছে মানুষের মধ্যকার পারিবারিক বন্ধনগুলো ক্রমান্বয়ে ¤্রয়িমান হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে অধিক হারে ঝুঁকে পড়ার কারণে নানা সংকট সৃষ্টি করছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিয়ের উপর। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ঘাটতি দেখা দিলে বিয়েটি শেষ পর্যন্ত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে বিষয়টি ডিভোর্সের দিকে গড়ায়।

চসিকের গঠিত সালিশী পরিষদের বর্তমান দায়িত্ব পালন করছেন কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলা জজ) মো. জসিম উদ্দিন। তালাকের এই ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন এটি সত্য যে, করোনা পরবর্তী সময়ে ডিভোর্সের হার আরো বেড়ে গেছে। চসিক এলাকায় বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১৫টি করে ডিভোর্স হচ্ছে। এটি খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশকিছু ডিভোর্স হচ্ছে বিয়ের মাত্র ১ বা ২ বছরের মধ্যে। আবার মধ্য বয়স্ক মানুষের মধ্যেও অনেক ডিভোর্স হচ্ছে। ডিভোর্সের এই প্রবণতা আমাদের সমাজের জন্য মোটেও ভাল নয়। ডিভোর্স হওয়া স্বামী বা স্ত্রীর মনে যে ক্ষত তৈরি হয় সারাজীবনেও হয়তো তার লাঘব সম্ভব হয় না। যেসব ক্ষেত্রে সন্তান থাকে, ডিভোর্সের পর সেসব সন্তানকে সারাজীবন ভঙ্গুর পরিবারের কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।