জাতীয়

কামিল পাস করে এমবিবিএস ডিগ্রি!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি নামে ইউনিভার্সিটি খুলে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাডভোক্যাশিপ এ ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের ওপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট দিতেন ভুয়া চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২)। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এমন শত শত ডিগ্রিধারী ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

বিনিময়ে প্রতিটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য হাতিয়েছেন পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এসব ভুয়া চিকিৎসক ছড়িয়ে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেফতাররা মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাস করে কোনোভাবেই এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন সম্ভব নয়।

ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও একজন সহযোগীসহ ভুয়া চার এমবিবিএস ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম।

বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ছয়জন হলেন- মূলহোতা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির ভিসি ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), মো. মোয়াজ্জেম হোমেন (৫৮), ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), ডা. মো. আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুণ্ডু (৫২)।  

এ সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল যাতে ‘VARIFIED AND FOUND CORRET PROFF DR SHAHARIER AHAMMED, VARIFIED AND FOUND CORRET PROFF DR M N HAQUE Chairman primer university of technology, PROFF DR sheikh nurul goni vice chancellor primer university of technology, it is found correct & o k prof. dr quiyum commander’ ইত্যাদি লেখা। এছাড়া চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভুয়া সনদ দেওয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বার এর কপি ও একটি সিপিইউ ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। যা এসব ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে ব্যবহৃত হয়।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।  

তিনি বলেন, চক্রটি প্রায় দুই যুগ ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করে আসছিল। প্রতারণার কাজে তারা ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। তাদের কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ হাইকোর্টের জাল রিট দেখাতো । এমনকি প্রতারক চক্রের রোগী দেখার চেম্বার অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত এবং নামফলক সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি উল্লেখসহ আকর্ষণীয়ভাবে প্রদর্শন করতো।

তারা এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাডভোক্যাশিপ এই ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের ওপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাস্তবে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির কোনো অস্তিত্ব নেই।  

একইভাবে ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার নিজেকে ‘Pitch Blende university of Science and (PUST) এবং Peace Land university’ ইত্যাদি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, দেবাশীষ কুণ্ডু, ডা. মো. আমান উল্ল্যাহ, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ আরও অসংখ্য ব্যক্তিদের ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্রসহ অন্যান্য অসংখ্য বিষয়ে ভুয়া সনদপত্র দিয়েছেন। এ প্রতারক ডাক্তার নুরুল হক সরকার তার পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র দেওয়ার একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। এ সংঘবদ্ধ চক্র কোনো রকম পরীক্ষা ক্লাস ও বৈধ অনুমোদন না নিয়েই টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৪৪ ধরনের ভুয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করতো। যা সংঘবদ্ধ চক্রটি তাদের বাসায় ও ভাড়া করা অফিসে বসে বিভিন্ন সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আদলে কম্পিউটার প্রিন্ট করে সরবরাহ করে আসছিল। এর বিনিময়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির ভুয়া ভিসি হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, ডা. মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ ও ডা. মো. আমান উল্লাহ একটি মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাস করে কোনোভাবেই এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার খুলে এসব চিকিৎসক রোগীও দেখতেন নিয়মিত।  
 
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সার্টিফিকেট প্রত্যাশীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের জন্য যোগযোগ করতেন এবং পার্সেলের মাধ্যমে ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো পাঠানো হতো। এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার। এমবিবিএস ডিগ্রি দেওয়ার সঙ্গে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দিতেন, সেটিও ছিল ভুয়া। ডা. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির মালিক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। তার ইউনিভার্সিটিতে কতজন শিক্ষক রয়েছেন সেটিও তিনি ভুলে গেছেন বলে জানান। সম্পূর্ণটাই তার ভণ্ডামি। প্রতারক হিসেবে এই লাইনে তিনি প্রসিদ্ধ।  

এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে দুজন আছেন চাকরিজীবী। সাভারে একজনের চেম্বার রয়েছে এবং ডায়াগনস্টিক চেম্বার রয়েছে।

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছেন সেগুলো ইউজিসির ওয়েবসাইটে গেলেই অভিভাবকরা খোঁজ নিতে পারবেন। সেই ইউনিভার্সিটি অনুমোদনপ্রাপ্ত কিনা এবং তাদের নামে কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা তাও জানা যাবে।