চট্টগ্রাম

কিছুতেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

প্রকল্পটি গ্রহণকাল থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের। এই প্রকল্পে গার্ডার ধসের কারণে সিডিএ চরমভাবে সমালোচিত হয়। সর্বশেষ গত সোমবার দুই পিলারের ফাটলের খবরে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু থেকেই নির্মাণ ত্রুটি নিম্নমানের জয়েন্ট এক্সপানশন ও বিয়ারিং প্যাড লাগানো, কাজের দীর্ঘ সূত্রিতা, জনভোগান্তি এসব কারণে এই ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াতকারীদের প্রশ্ন, এটি তাদের জন্য অভিশাপ না আশীর্বাদ?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোন ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া ওয়াই আকৃতির ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সিডিএ। কাজ শুরু করার পর নামকাওয়াস্তের একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। কাজ শুরু হলে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর বহদ্দারপুকুর পাড়ে গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সরকারি হিসাবে ১১ জন নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। যা সারাদেশে আলোচিত হয়। এই বড় দুর্ঘটনার পরও ছোট-খাটো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। মির আকতার এন্ড পারিশা নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি যৌথভাবে পেলেও মূলত কাজটি করে অনভিজ্ঞ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পারিশা। দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কাজটি সম্পন্ন করা হয়। তবে সেসময় আরাকান রোডমুখী র‌্যাম্পটি আর করা হয়নি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১১ জনের মৃত্যু ও অর্ধশত আহত হওয়ার পর গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও ফ্লাইওভারে নির্মাণত্রুটি ধরা পড়ে। কমিটির রিপোর্টে ফ্লাইওভারের নিম্নমানের বিয়ারিং প্যাড, এক্সপানশন জয়েন্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারিগরি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে ৩৬৮টি বিয়ারিং প্যাড বদলানো হয়। ওইসময় ফ্লাইওভারের উপরে আকৃতিতে কিছু পরিবর্তনও আনা হয়। এছাড়া দুটি স্প্যানের মধ্যবর্তী জয়েণ্টে ব্যবহৃত উপকরণ বদলে আন্তর্জাতিক মানের এক্সপানশন জয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুলকবহর হতে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। নির্মাণ কাজশেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‌্যাম্পটি নির্মাণশেষে ২০১৭ সনের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই র‌্যাম্প নির্মাণের ঠিকাদারি পায় ম্যাক্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। র‌্যাম্পটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কিছুদিন পরই মূল ফ্লাইওভারের সাথে এটি যেখানে যুক্ত হয়েছে সেখানে প্রায় দুই ইঞ্চি দেবে যায়। যানবাহন র‌্যাম্পে উঠার সময় যা স্পিডব্রেকারের মত কাজ করে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট নগরবিদ ও আইইবি’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ফ্লাইওভারটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন এই ধরনের কাজের জন্য সিডিএ’র অভিজ্ঞতা ছিল না। যেকারণে কাজের তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি। অপরদিকে, মির আকতার এবং পারিশা যৌথভাবে কাজের ঠিকাদারি নিলেও মূলত কাজটি মির আকতার করেনি। যে প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাদের এই ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা ছিল না। অনেক জোড়াতালি সেখানে দেয়া হয়েছে। মূল পরিকল্পনায় ছিলনা এমন কিছু যুক্ত হয়েছে। জনগণের করের টাকায় বিশাল একটি কাজ করা হয়েছে, যেখানে জনগনের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা দুটোই যুক্ত। আপাতত যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে। এটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। রোডস এন্ড হাইওয়ে, রেলওয়ে তাদের ব্রিজগুলো নিয়মিত চেকআপ করে। কখন কোন পর্যায়ে চেকআপ হবে তার ম্যানুয়েল আছে। আমি মনে করি দ্রুততার সাথে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের দ্বারা তদন্ত করে এটি ব্যবহার উপযোগী কিনা তা যাচাই করা উচিত। ফ্লাইওভারটি বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। এখানে তাদের দায় না থাকলেও দায়িত্ব আছে। এই বিষয়গুলোকে সিটি কর্পোরেশনের উচিত সামনে নিয়ে আসা। সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত। তাই তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি।