জাতীয়

চালের মজুত বাড়াচ্ছে শিল্প গ্রুপ ও মিলার, নাভিশ্বাস ভোক্তাদের


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

পৌষ মাসকে আমনের ‘ভরমৌসুম’ বলা হয়। কারণ মাসখানেক আগে আমন ধান কাটা শুরু হয়। মাড়াই ও শুকানোর পর বাজারে আসছে নতুন ধান। এসময়ে স্বাভাবিকভাবে চালের দাম কমতি থাকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে উল্টোপথে হাঁটছে চালের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি দু-তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি, বড় মিলার ও শিল্প গ্রুপ ধান মজুতের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে বাজার অস্থির করে তুলেছে মিলার-শিল্প গ্রুপের মালিকেরা। কৃষকের লাভের নামে পকেট কাটছে সাধারণ ভোক্তাদের। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিল্পপতিরা বাজার দখল করে নিয়েছে। ভোক্তাদের নাভিশ্বাস ওঠেছে।


নগরীর চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমনের ভরা মৌসুম। বড় বড় শিল্প গ্রুপ ও মিলাররা প্রচুর পরিমাণ চাল মজুত করেছে। তাদের কারসাজির কারণে চালের দাম ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে।’
আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে সরকার। এবার ধান ও চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। আতপ চাল ৩৮ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা দরে কিনছে সরকার। এছাড়াও কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য দুই মাস ধরে চাল আমদানিও বন্ধ রেখেছে সরকার। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও অস্থির হয়ে ওঠেছে চালের বাজার।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, নূরজাহান সিদ্ধ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) দুই হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২১৫০ টাকা থেকে ২২শ টাকা দরে। বেতি আতপ ২১শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩শ-২৩৫০ টাকা। মিনিকেট আতপ ২৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ টাকা দরে। কাটারি সিদ্ধ (২৫ কেজি বস্তা) ২২শ টাকা থেকে বেড়ে ২৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি আতপ ৩২শ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩শ-৩৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ২৮শ-২৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৯শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়তি। এখন তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। আর তেলের দাম বাড়তির অজুহাতে ট্রাক ভাড়া বেড়েছে ৫ হাজার টাকা। তাও পড়বে চালের দামে। সবমিলে সাধারণ ভোক্তাদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা।’
জাফর আলম বলেন, মিল মালিক, বড় শিল্প গ্রুপ-ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বেড়েছে চালের দাম। সিন্ডিকেটটি প্রচুর পরিমাণে চাল মজুত করেছে। সরকারের মনিটরিং না থাকায় এখন বাজার অস্থির করে তুলেছে সিন্ডিকেটটি। কৃষকের লাভের নামে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। আর সব লাভ লুটে নিচ্ছে শিল্পপতিরা।
চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দুই মাস ধরে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আমিদানিকারকরা। আগে আমদানি করা চাল এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। প্রচুর মজুত থাকার পরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চালের দাম ৩শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মিলারদের দাবি, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে আমন ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, আমন মৌসুমে চালের দাম কিছুটা কমার কথা। কিন্তু সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করায় ধানের দাম বাড়তি রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।’ তিনি বলেন, সরকারের বাড়তি দামে কৃষক ধানে কেজিতে এক টাকা বাড়তি পেলেও মিল মালিকেরা কেজিতে তিন টাকা বাড়তি পাচ্ছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক, লাভবান হচ্ছে বড় মিলাররা।
ব্যবসায়ী ও মিলারদের দাবি, ধানের দাম বাড়তি থাকায় চালের দাম বেড়েছে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।’ তারা দাবি করেন, চাল আমদানি বন্ধ থাকায় ভারতীয় চালের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই কম। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।