জাতীয়

চুরির টাকায় লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্ত্রী-সন্তানদের!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ। শত শত ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানের মালিক। মৌলভীবাজারে তার আলিশান বাড়ি। আছে বিলাসবহুল গাড়ি। স্ত্রী-সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন লন্ডনে। এর সবই হয়েছে গার্মেন্টস পণ্য চুরির টাকায়। চোরচক্রের মূলহোতা সাঈদ এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ হাজার চুরির ঘটনা ঘটিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পোশাক। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ২৪ মামলা। চট্টগ্রামে ছয় মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছেন সিলেটি সাঈদ। সম্প্রতি বেরিয়ে এসে আবারও সেই পুরনো পেশার নেতৃত্বে বসেন। এবার চক্রের ছয় সহযোগীকে নিয়ে ধরা পড়লেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাদের জালে। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছিল সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রটি। বিশ্বে লিডিং রপ্তানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টসশিল্পকে ঘিরে এই চোরচক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। হাফিজ আক্তার বলেন, নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক রপ্তানির উদ্দেশে গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে ১৭ হাজার ১৫২ পিস চুরি হয়।

ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। এর পর গার্মেন্টস পণ্য চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও বিভাগের গোয়েন্দাদের একটি টিম। গত শুক্রবার থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা ও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- সাঈদের সহযোগী রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আল আমিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের কাছ থেকে চার হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।

হাফিজ আক্তার আরও বলেন, জয়ন্তী নিটওয়্যার লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে গত ১১ মে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এ জন্য বিদেশি বায়ার সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। পরে ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিনজনকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টস এক হাজার ৪৩১ কার্টনে করে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। শিপমেন্টের সময় গণনায় পাঁচ হাজার পিস পোশাক কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তরা এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস পণ্য ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ আল আমিন ও দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যমতে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদকে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সাঈদ তার নিজস্ব যানবাহনে এসব পণ্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজাতেন।