জাতীয়

ডিএনসিসির মশার ওষুধ ব্যবহার করবে চসিকও


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নগরীর মশক নিধনে আলাদা বিভাগ করার উদ্যোগ নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। একইসাথে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে চায়। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিধন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম দেখে এসেছেন চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। ঢাকা থেকে এডাল্টিসাইড হিসেবে ফগার মেশিনে পরীক্ষামূলক ব্যবহার নমূনা হিসেবে পরীক্ষার জন্য ১০০০ লিটার ম্যালথিয়ান ৫% কিনে আনা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দল গবেষণা করে মশক নিধনের জন্য যে ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তা খুব ব্যয়বহুল। এক লিটার ওষুধের সাথে ৫৯ লিটার ডিজেল মেশাতে হয়। ডিএনসিসি এবং বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত ওষুধের মাধ্যমে মশক নিধন করছে। আমরাও সেভাবে নিধন করতে চাই। তিনি বলেন, এখানে আরো সমস্যা আছে। যারা মশক নিধনে নিয়োজিত তাদের দক্ষতার অভাবও রয়েছে। ওষুধ কম দিলে মশা মরবে না, বেশি দিলে অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিধন হয়ে যাবে। প্রশিক্ষণেরও দরকার আছে। যদি মশক নিধনে আলাদা বিভাগ করা যায়, তাহলে বিভাগটি দক্ষ হয়ে উঠবে। বর্জ্য বিভাগকে চার জোনে ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সাধারণ সভায় আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহের প্রস্তাব উঠে। আপাত পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি ওয়ার্ডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তাতে সফল হলে ক্রমান্বয়ে ৪১ ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করা হবে।
এবিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি ঢাকা থেকে এসে এবিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছেন। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানাবেন।


ডিএনসিসি’র অভিজ্ঞতা অর্জন : চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, মেয়রের নির্দেশে তিনি গত সপ্তাহে ডিএনসিসি মশক নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দেখে এসেছেন। ডিএনসিসি’তে ৮৬৪ জন লোকবল নিয়মিত মশক নিধন করছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে স্থানীয় সরকারের একটি মশক নিবারণী দপ্তর রয়েছে। সেই দপ্তর থেকে ১৪ জন সুুপারভাইজার এবং ২১৬ জন স্প্রেম্যান কাজ করেন, যাদের বেতন সরাসরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রক পরিশোধ করে। ডিএনসিসি তাদের ১৮০ টাকা করে যাতায়াত বিল পরিশোধ করে। এছাড়া ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক সুপারভাইজার রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে মশক নিবারণী দপ্তর হতে ৮ থেকে ১০ জন এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০ জন মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০ জন স্প্রেম্যান মশক নিধনে কাজ করে। ডিএনসিসি’র ৫৪টি ওয়ার্ডকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। অথচ চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে কোন জোন নেই। চসিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধন করে পরিচ্ছন্ন বিভাগের মাধ্যমে। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণসহ সকল সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনের জন্য আলাদা কাঠামো রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে মশক নিধনে ডিএনসিসি’র বরাদ্দ ৮৫ কোটি টাকা। এডাল্টিসাইট ছিটানোর জন্য রয়েছে ৯০০টি থার্মাল ফগার মেশিন। এছাড়াও ১৫০ লিটার ট্যাঙ্ক সমৃদ্ধ গাড়িতে বহনযোগ্য উচ্চ মাত্রার ফগিং সক্ষম ১৫টি মেশিন। তাদের রয়েছে কীটতত্ত¡বিদের ১১ সদস্যের কমিটি। চসিকে কোনো কীটতত্ববিদ নেই। গতকাল তিনি সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেন উল্লেখ করে বলেন, আগামী সাধারণ সভায় আরো বিস্তারিতভাবে একটি আলাদা মশক নিধন বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে চারটি জোনে ভাগ করে আরো কিভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।


কমিটির সুপারিশ :ডিএনসিসি,, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, নারায়গঞ্জ সিটি কর্পোরেশন লার্ভিসাইড হিসাবে টেমিফস ৫০% ইসি ১.৫ মি.লি প্রতি লিটার পানিতে মিশ্রণের মাধ্যমে প্রয়োগ করে। রোগতত্ত¡ রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট (আইইডিসিআর) নমুনা পরিক্ষায় এই ওষুধে শতভাগ লার্ভার মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টেমিফসকে লার্ভা ধ্বংসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, টেমিফস ৫০% ইসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদর্শিত লার্ভানাশক লার্ভিসাইড হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। বাংলাদেশ রোগতত্ত¡, রোগ নিরূপণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট পরিচালিত বায়োলজিক্যাল এফিকেসি পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকর লার্ভানাশক হিসেবে পরীক্ষিত। এটি ১ লিটারে ১.৫ এম এল পরিমাণে প্রয়োগ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শতভাগ কার্যকর মসকুবার নামক লার্ভিসাইট প্রয়োগ করতে পানির পরিবর্তে কেরোসিন এবং ১.৫ এমএল এর পরিবর্তে ১৬.৯ এম এল কেমিকেল ব্যবহার করতে হয়। ফলে মাসকুবার ব্যবহার অধিক ব্যয় সাপেক্ষ এবং তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সমর্থিতও নয়।

পিওপা (মূককীট) ধ্বংসের কার্যকর পদ্ধতি : ড্রেন এবং বদ্ধ পানিতে লাইট ডিজেল অয়েল ব্যবহার করে আসছে চসিক। মূককীট লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বে ইংরেজি কমা (,) রূপ ধারণ করে পানির উপরিভাগে ভাসে। এই পর্যায়ে লার্ভিসাইড বা এডাল্টিসাইড দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমেরিকান সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন তাদের ওয়েবসাইডে পিওপা কন্ট্রোলের জন্য বদ্ধ পানির উপর খনিজ তেল ব্যবহার করে শ্বাসরোধ প্রক্রিয়াকে একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করে। চসিকও খনিজ তেল/এলডিও প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে পারে।
এডাল্টিসাইডঃ পূর্ণাঙ্গ মশা নিধনের কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে বিশ্বব্যাপী থার্মাল ফগিংয়ের মাধ্যমে স্বল্প মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ স্বীকৃত। থার্মাল ফগিংয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট প্রতিটি ধোয়ার কোনায় স্বল্প মাত্রায় কীটনাশক বহন করে এবং বিষক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মশা বেহুঁশ হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মরে যায়। ডিএনসিসি কার্যকর এডাল্টিসাইড কীটনাশক অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে। পতঙ্গবিদগণের পরামর্শে ৫% ম্যালাথিয়ন ফরমুলেশন একটি কার্যকর এডাল্টিসাইট হতে পারে বলে তারা মত দেন। ৫% ম্যালাথিয়ন আর এফ ইউ (রেডি ফর ইউজ) ফরমুলেশন দিয়ে আইইডিসিআর মেডিকেল এন্টেমলজি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় ভাল ফল পাওয়া যায়।