জাতীয়

তিন ভাইয়ের ফাঁসি, বাবার যাবজ্জীবন


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত শরীফ খাঁ হত্যা মামলায় সহোদর তিন ভাইকে ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। একই মামলায় তাদের বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক শারমিন নিগার এ রায় দেন। এ সময় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁ আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তার তিন ছেলে হলেন জাকির খাঁ, মাহবুব খাঁ ও গাজী খাঁ। তাদের বয়স যথাক্রমে ৪০, ৩০ ও ২৪ বছর।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণার সময় শুধু আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তার তিন ছেলেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে আসামিদের সঙ্গে শরীফ খাঁর পরিবারের বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয় মাতব্বররা এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করলেও আসামিরা তা অমান্য করেন।

পরে ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শরীফ খাঁর বাড়ির একটি গাছ কাটতে থাকলে শরীফ খাঁ এতে বাধা দেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে শরীফ খাঁ, তার ছেলে রবিন খাঁ, রাসেল খাঁ, স্বজন মোশারফ খাঁ, বাদশা খাঁ ও ৭৫ বছর বয়সী আছিয়া বেগমকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেদম মারধর করেন। এ সময় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে শরীফ খাঁকে মারাত্মক জখম করেন আসামিরা।

ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা শরীফ খাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা নেয়ার পথে নরসিংদী এলাকায় পৌঁছালে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই শরীফ খাঁ মারা যান।

এ ঘটনায় শরীফ খাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম প্রকাশ লিপি ওইদিন রাতেই জাকির, মাহবুব, গাজী, আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁ ও আমির খাঁর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি আখাউড়া থানার এসআই মো. আকরামুল হককে তদন্ত করার জন্য দেয়া হয়। তদন্তকালেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মামলার আসামি আমির খাঁ মারা যান।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল জাকির, মাহবুব, গাজী ও আমানত খাঁ প্রকাশ আম খাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন এসআই আকরামুল হক।

আদালত মামলার ১১ জন সাক্ষীর তিনজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণা করে।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি অ্যাডভোকেট আজাদ রাকিব আহমেদ প্রকাশ তুরান। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহ পরান।

রায়ের পর মামলার বাদী ও নিহত শরীফ খাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম প্রকাশ লিপি বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাঁসির দণ্ড পাওয়া তিন আসামি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ভারপ্রাপ্ত পিপি অ্যাডভোকেট আজাদ রাকিব আহমেদ প্রকাশ তুরান বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ পরান বলেন, ‘রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিরা বর্তমানে বিদেশে আছেন। তারা বিদেশ থেকে ফিরে এলে তাদের পক্ষেও আপিল করব।’