জাতীয়

দামের আগুনে পুড়ছে রূপালি ইলিশের স্বাদ!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। শুরু হয়েছে ইলিশের ভরা মৌসুম।

নদীতে প্রতিদিন ধরা পড়ায় বাজারে সরবরাহও বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতেই সুদূর বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে ট্রাকবোঝাই ইলিশ গিয়ে নামছে রাজশাহীতে। কিন্তু বিধিবাম; সুস্বাদু ইলিশে বাজার ভরে উঠলেও দাম কমেনি মোটেও!

আকাশছোঁয়া দামের কারণে বাজারে দরদাম করেই বাড়ি ফিরছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। অধরাই থেকে যাচ্ছে রূপালি ইলিশ। মনে চাইলেও অনেকেই সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ মুখে নিতে পারছেন না। তাই দামের আগুনে পুড়ছে ইলিশের স্বাদ!

মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার মাছপট্টিতে আজ সকালে রূপালি ইলিশ কিনতে গিয়েছিলেন ঘোড়ামারা এলাকার সোহেল আহমেদ। ইলিশের দামে চরম ক্ষুব্ধ এই ক্রেতা বলেন, টিভির খবরে দেখাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। দামও কম। 

অথচ বাজারে ইলিশ কিনতে এসে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। বিভিন্ন আকৃতির ইলিশের দাম আগের মতোই চড়া। সাড়ে ৫শ টাকা দিয়ে ১ কেজি গরুর মাংস কেনা গেলেও ১ কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে ১ হাজার ৪শ টাকা গুণতে হচ্ছে। ৫শ থেকে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৫শ থেকে ৭শ টাকারও বেশি। তাই তার মতো অনেক মানুষই বাজারে এসে ইলিশের দর-দাম করেই বাড়ি ফিরছেন। ইলিশের স্বাদ আর মুখে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশের বাড়ির ইলিশ ভাজার সুবাস নিয়েই আপাতত সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। 

আবদুল মতিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুম চলছে। পদ্মা ও মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন কাঁচাবাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু দাম কমেনি। অক্টোবরে থেকে ইলিশ আহরণ আবারও বন্ধ থাকবে। তাই আরও এক মাস বাজারে ইলিশ মাছের প্রাচুর্য থাকবে। কিন্তু বাজারের ইলিশের দামে আগুন লেগেছে। ভরা মৌসুমেই যখম এমন দাম। তখন অন্য সময় দাম কেমন থাকবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। আগেও যেই দাম ছিল, ভরা মৌসুমেও সেই দাম? বরং এখন একটু বড় ইলিশ পাওয়া যাওয়ায় ক্ষেত্র বিশেষ দাম আরও বেশি হাঁকা হচ্ছে। এককেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে হলে কম করে হলেও ১ হাজার ৪শ টাকা খরচ করতে হবে। আর সবচেয়ে ছোট (৪.৫০ গ্রাম) ওজনের একটি ইলিশ মাছ কিনতে গেলেও তা ৫শ টাকার নিচে নয়। তাই বাজারে আসলেও সবার পক্ষেই ইলিশ মাছ কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

আসাদুজ্জামান নামে আরেক ক্রেতা সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম বাড়ানোর অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে সরাসরি ট্রাকযোগে ইলিশ এসে নামে নিউমার্কেট এলাকায় সেখান থেকে সাহেববাজার, শালবাগান ও নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন বড় বড় বাজারে ইলিশ চলে যায়।

ক্রেতারা একটু কম দামে ইলিশ পাওয়ার জন্য আগে ভোরে নিউমার্কেটে থাকা ইলিশের পাইকারী আড়তে যেতেন। কিন্তু এবার পাইকারী আড়তেও ইলিশের দাম বেশি। আর পাইকারী বাজারে যে দাম খুচরা বাজারেও সেই একই দাম। সব মিলিয়ে যেটা বোঝা যাচ্ছে সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজশাহীর যে বাজারেই যান না কেন, ওজন ভেদে ইলিশের দাম একই রকম।

এদিকে মহানগরীর সাহেববাজার ও নিউমার্কেট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি, ৫শ’ গ্রাম থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়, ৭শ’ গ্রাম থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮শ থেকে ৯শ টাকায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪শ টাকায়। আর এর ওপরে থাকা বড় সাইজের ইলিশ মাছগুলো এক হাজার ৫শ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ইলিশ নিতে একদিন আগেই ওর্ডার দিয়ে আসতে হবে। ইলিশের খুচরা বিক্রেতা আলী হোসেন। তিনি বলেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এবার মোকামেই এই মাছের দাম বেশি। এর ওপর পরিবহনের জন্য যোগ হয় বাড়তি খরচ। সবমিলিয়ে তাদেরকে আরও একটু বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে হয়। না হলে লাভ হয় না।

আর এই কারণে খুচরা ও পাইকারী বাজারে দামের কোনো তারতম্য নেই। দাম প্রায় একই। তবে যারা সরাসরি পাইকারী বাজার থেকে ইলিশ কিনবেন তারা ছোট ও বড় সাইজের মাছ মিলিয়ে নিতে পারেন। এতে বেশি মাছ নিলে ছোট মাছের সঙ্গে কয়েকটা বড় মাছও পান। খুচরা বাজারে সেই সুযোগ নেই। কারণ এখান থেকে মাছ নিয়ে তারা বড় মাছগুলো সাইজ অনুযায়ী বাছাই করে ফেলেন এবং সেগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করেন। কারণ ওজন হিসেবেই ইলিশের দাম নির্ধারণ হয়।

রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকার পাইকারী মাছের আড়তদার সেলিম হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষের পর রাজশাহীসহ সারা দেশেই ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। বিশেষ করে বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে প্রতিদিনই ৩/৪ ট্রাক ইলিশ আসছে। মোকামে নিলামের পর কয়েক হাত ঘুরে তার পরই আসছে। ফলে ওজন ভেদে কেজি প্রতি মাছ ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম এমনিতেই বেড়ে যাচ্ছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলেও দাবি করেন ইলিশের এই পাইকারী ব্যবসায়ী।