জাতীয়

শিশুকে পৈশাচিক নির্যাতনের পর হত্যা : সৎ বাবা ও মা গ্রেপ্তার


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কক্সবাজারের উখিয়ায় সুমাইয়া আক্তার নামে চার বছরের এক শিশুকে পৈশাচিক নির্যাতন ও অত্যাচারের পর হত্যা করে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা সৎ বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার দীর্ঘ চার মাস পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-নিহত সুমাইয়ার মা বুলবুল আক্তার (২৫) এবং সৎ বাবা নুরুল হক (৩৫)। তারা উখিয়ার ৩ নং হলদিয়াপালং ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের পূর্ব মরিচ্যা কাঠালিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

এসপি মো. হাসানুজ্জামান জানান, নুরুল হক শিশুটির সৎ বাবা হলেও ছোট্ট সুমাইয়া তাকে আব্বু বলেই ডাকতো। উখিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকাকালে আশপাশের কারো সঙ্গেই তাদের কোন সখ্যতা গড়ে উঠেনি।

জানা গেছে, প্রায় দুই মাস ওই কলোনিতে ভাড়া থাকা অবস্থায় ঘাতক নুরুল হক তার স্ত্রী বুলবুল আক্তারের সহযোগীতায় শিশুটিকে বিভিন্ন সময়ে অমানবিক নির্যাতন করেন। কখনো প্লাস্টিকের রশি দিয়ে ঘরের চালের তীরের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে, কখনো মাথায় আঘাত করে, কখনো গালে কামড় বসিয়ে আবার কখনো বা পেটে-পিঠে ঘুষি মেরে চলতে থাকে অমানবিক পৈশাচিক নির্যাতন। অসহনীয় ব্যথায় শিশুটির চিৎকারেও ঘাতক বাবা নুরুল হক কিংবা মা বুলবুল আক্তারের মন গলেনি।

এসপি জানান, গত ১৫ এপ্রিল রমজানের ২য় দিন সকাল থেকে শিশু সুমাইয়া (৪) কে না খাইয়ে রাখেন ঘাতকরা। এমনকি তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি৷ ওইদিন বিকেল থেকে শিশুটির উপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে ঘাতক নুরুল হকের ঘুষির আঘাত। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে৷ পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে শিশুটির গলাটিপেও ধরা হয়। ওইদিন দিবাগত রাত ১১টার দিকে শিশুটি মারা যায়। এরপরই শিশুটিকে ঘরের মেঝেতে পাটির উপর শুইয়ে কম্বল চাপা দিয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে ঘাতক বাবা ও মা পালিয়ে যায়।

পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রোজিনা আক্তার সুমাইয়াদের ঘরে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পরে দরজা তালাবদ্ধ দেখে পাশের রুম থেকে পার্টিশন বেড়ার উপর দিয়ে দেখে শিশু সুমাইয়ার নিথর দেহ কম্বল চাপা অবস্থায় বিছানার উপর পড়ে আছে৷ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে বিস্তারিত উখিয়া থানা পুলিশকে জানায়। সংবাদ পেয়ে উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনার চারদিন পর উখিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা রুজু করে। দ্বিতীয় দিন পুনরায় ঘটনাস্থলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিদর্শনকালে ঘরে একটি সিম কভার খুজে পাওয়া যায়৷ উক্ত কভারের ভেতর থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আরও বলেন, ভিন্ন এলাকা, ভাসমান অবস্থায় ঘোরাঘুরি এবং ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করার কারণে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছিলো না। ঘটনার চার মাস পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উখিয়া থানার একটি চৌকস টিম রামু থানাধীন গর্জনীয়া এলাকায় গিয়ে কৌশলে আসামিদের ধরতে সমর্থ হয়। পরে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে সুমাইয়াকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে ঘাতকরা।

গতকাল সোমবার শিশুটিকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন আসামিরা। বর্তমানে তাদের জেলখানায় রাখা হয়েছে বলেও জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান।