আন্তর্জাতিক

দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে বাংলাদেশকে অনুসরণ পাকিস্তানের


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটে পড়া পাকিস্তান দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে এবার বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। খরচ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ কার্যকরী মেনে এগোচ্ছে দেশটি।

সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে বিপণিবিতান বন্ধ, বিয়েসহ অন্য অনুষ্ঠানগুলো বেঁধে দেয়া সময়ে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছে শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভা।

এর মাধ্যমে যেন বাংলাদেশকেই মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে পাাকিস্তান। আর টক শোতে পাকিস্তানি উন্নয়নকর্মী এবং কলামিস্ট জাইঘাম খানের দেয়া ‘পাকিস্তানের উন্নয়ন যদি ঘটাতে চান, সুইডেনকে না দেখে বাংলাদেশের দিকে তাকান। পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো বানান’, বক্তব্যও মেনে নিচ্ছে দেশটি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শ্রীলঙ্কার পরিণতির দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিও দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, যা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে দেশটির গণমাধ্যমেও।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি বৈদেশির মুদ্রার রিজার্ভের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে অর্থনীতিবিদদের। এ দেশের হাতে কেবল ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আছে। এ অর্থ দিয়ে টেনেটুনে এক মাস চলা যাবে।

এ অবস্থায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি সংকটের সমস্যা কাটাতে এমন সিদ্ধান্তগুলো গত বছরের জুনেই নিয়েছিল বাংলাদেশ।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে ও রিজার্ভ সংরক্ষণে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিপণিবিতান বন্ধ করতে হবে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে রাত ১০টায়। বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় এমন ক্ষেত্রগুলোতে সতর্ক থেকে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ পরিকল্পনার অধীনে এই সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সম্পদের ন্যায়সংগত ব্যবহার নিশ্চিত করতে নেয়া হয় কিছু ব্যবস্থা।

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সংরক্ষণ পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি সারা দেশে একযোগে কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, ‘রেস্তোরাঁ, হোটেল, বিপণিবিতান রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে এবং বিয়ের অনুষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। বাণিজ্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে বার্ষিক প্রায় ৬২ বিলিয়ন রুপি সাশ্রয় হবে।’

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তান এতদিন পরে এসে যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা বাংলাদেশ নিয়েছিল গত বছরের জুনে। ওই সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত আটটার পর সারা দেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার।

পরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিসের সময় পুনর্নির্ধারণ, বাতি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহারে সতর্ক হতে পরামর্শ দেয় সরকার। এরপর আরও কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়। এতে সুফলও মিলেছে।

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ২০তম প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতির পর আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি এ দেশের অর্থনীতি। নওয়াজের কাছ থেকে বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন শহীদ খাকান আব্বাসি। সংকট কাটাতে ব্যর্থ হন তিনিও।

পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া বিপুল ঋণ নিয়ে পাকিস্তানের মসনদে আসেন ইমরান খান। সৌদি আরব এবং চীনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে কোনোভাবে পাকিস্তানকে টেনে নিচ্ছিলেন ইমরান। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তিনিও থিতু হতে পারেননি।

ইমরানকে সরিয়ে এরপর ক্ষমতায় আছেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জোর গলায় বলছেন, ‘পাকিস্তান খেলাপি হবে না।’ তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট তার দাবিকে সমর্থন করছে না।

ডন লিখেছে, পাকিস্তানের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। বর্তমান অর্থনীতির সবদিক বিবেচনা করে পাকিস্তান ডিফল্টের (দেউলিয়া) খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেহবাজের নেতৃত্বাধীন পিডিএম সরকার গত এপ্রিলে ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার থেকে ক্ষমতা বুঝে নেয়। সে সময় পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আট মাসে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

দেউলিয়ার আশঙ্কা যে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না তা ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দর দেখেই অনুমান করা যায়। এপ্রিলে এক ডলার বিক্রি হতো ১৮০ রুপিতে। সম্প্রতি আন্তঃব্যাংক বাজারে তা ২২৬ রুপিতে লেনদেন হয়েছে।