জাতীয়

দৈনিক ২০০ টাকা জমায় ঢাকায় মিলবে ফ্ল্যাট বা জমি!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দৈনিক মাত্র ২০০ করে টাকা জমা করলেই একসময় মিলবে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিংবা জমি। পাশাপাশি যে কোনো সময় চাইলেই পাওয়া যাবে মোটা অংকের ঋণ। সীমিত আয়ের মানুষদের সামনেই এমন স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই অবৈধ ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ (৫০) এবং তার দুই নারী সহযোগী আফরিন আক্তার (২৪) ও তাসলিমা বেগমকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মিরপুরের মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করে। প্রতিষ্ঠানটি ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড’ হিসেবে রেজিস্টার্ড হলেও প্রতারণামূলকভাবে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে প্রচার ও বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো জামানত রক্ষিত নেই।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শাহ আলী থানাধীন মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহসহ মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে সেখান থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্র এবং ফয়েজ উল্লাহর নামে কমিউনিটি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নানা সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে তৈরি করা ভুয়া সমিতিতে ২০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে ৩০০ জন সদস্য রয়েছে। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের কোনো রক্ষিত জামানত নেই।

তিনি বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেব সদস্য সংগ্রহ করা হতো। এই চক্র মাঠ পর্যায়ের কর্মী/সদস্যদের মাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন বস্তি এলাকার প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, সেলুনের কর্মচারী, মনোহারি ও ফুটপাতের দোকানদার, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষদের টার্গেট করে ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে উদ্বুদ্ধ করতো। পরে তারা ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ ও বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে নানান কৌশলে ভুলিয়ে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতো। ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ প্রতিদিন আনুমানিক ৩০০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে।

পরে শ্রমজীবী মানুষদের ভুল বুঝিয়ে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প প্রচার করে যেমন—মুদারাবা ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা কোটিপতি বিশেষ সঞ্চয়, মুদারাবা লাখপতি ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা মিলিওনিয়ার ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা পেনশন ডিপোজিট। প্রলোভন দেখিয়ে দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল এই প্রতারক চক্র।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতারক ফয়েজ উল্লাহ ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে অল্প সময়ে ঋণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে সঞ্চয়/বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আগ্রহী করতেন। ভুক্তভোগীদের বলা হতো ১০-১৫ দিন ঠিকমতো নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় দিলে তাদের ঋণ দেওয়া হবে, যা দিয়ে তারা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। ভুক্তভোগীদের দুই-একজনকে ঋণ দিলেও কেউ সঞ্চয় থেকে ঋণ পেতেন না।

এই কোম্পানির কিছু সদস্য দৈনিক ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়/ডিপিএসের টাকা সংগ্রহ করতেন। ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো, তারা যদি সময়মত সঞ্চয়/ডিপিএসের টাকা না পরিশোধ করেন তাহলে তাদের সঠিক সময়ে ঋণ দেওয়া হবে না। অথবা মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবেন এবং জরিমানাও করা হবে।