আন্তর্জাতিক

পর্তুগালে ১২০০ বছরের পুরনো মসজিদ আবিষ্কার


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

‘লিসবোয়া সে’ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের অন্যতম বৃহৎ চার্চ। লিসবনের অন্যতম পর্যটন আগ্রহ। এ ছাড়া স্থানীয় ক্যাথলিক পর্তুগিজদের কাছে এই চার্চটি অনন্য গুরুত্ব বহন করে। এবার সেই চার্চে সন্ধান মিলল আইবেরিয়ান পেনিনসুলা যুগের তৎকালীন আলজেরীয় স্থাপত্যশিল্পের একটি মসজিদ।

ক্যাথলিক দেশ পর্তুগালে ধর্মীয় উপাসনালয়ে এমন একটি মুসলিম ঐতিহ্যকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভেবে আবিষ্কৃত মসজিদ স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার প্রস্তাব ওঠে। অনেকেই এটার অস্তিত্ব না রাখার পক্ষে ছিলেন।

মসজিদ স্থাপত্যটি ভেঙে ফেলার খবরে পর্তুগিজ প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ এবং বেশ কিছু বাম রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করে। এবং স্থাপত্যটি না ভেঙে বরং সেটি সংরক্ষণের দাবি জানায়। তারা মনে করে, মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ আমাদের সম্মিলিত ঐতিহ্য স্মৃতি। এটি ভেঙে ফেলা হবে চরম ঐতিহ্য ধ্বংসের মতো অপরাধ। পর্তুগিজ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পর্তুগিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তর (উচেঈ) জেনারেল লিসবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি চার্চে এই স্থাপনা না রেখে বরং মুসলিম ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষগুলো ভেঙে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।

ইতিহাসবিদ হেরমেনেগিলদো ফার্নান্দেস এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পর্তুগিজ একটা মনোভাব হলো তারা ইসলামিক ইতিহাসকে জাতীয় জীবনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করে। তাই পুরনো ইতিহাস আর স্থাপনাগুলো থেকে মুসলিম ঐতিহ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলাও হবে ঐতিহ্য ধ্বংসের মতো একটি অপরাধ। লিসবনের সর্ববৃহৎ চার্চের মধ্যে আবিষ্কৃত মসজিদটি রক্ষায় সোচ্চার পর্তুগিজ আরেক ইতিহাসবিদ ম্যানুয়েল ফিলো বলেন, ‘ইতিহাস মানেই ইতিহাস। পর্তুগিজ ঐতিহ্যে একটি মসজিদও পর্তুগিজ ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরবের অংশ। এ জন্যই আমাদের মসজিদটি রক্ষা করে ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে।’

পর্তুগিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশের পর পর্তুগিজ প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ এবং বেশ কিছু বাম রাজনৈতিক দল এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং তারা ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি জানায়। নানা মহলের চাপে পরিশেষে উচেঈ স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। এতে স্বস্তি জানান প্রত্নতাত্ত্বিক ও বেশ কিছু ইতিহাসবিদ।

৭১১ সাল থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন আইবেরিয়ান পেনিনসুলা (বর্তমান পর্তুগাল, স্পেন) অঞ্চলে প্রায় সাত শ বছরের দীর্ঘ সময় মুরসরা শাসন করে। সেই সময়ে মনোমুগ্ধকর সব স্থাপত্য, জ্ঞান ও মুসলিম সভ্যতা আর ঐতিহ্যে ইউরোপে আল-আন্দালুস বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলে আলোর দিশা হয়ে মুরসদের আগমন হলেও স্প্যানিশ, পর্তুগিজ অনেক ঐতিহাসিক মুসলিম সেই শাসনকালকে চরমভাবে উপেক্ষা করেন লক্ষ করা যায়। তবু স্পেনের আল-হামরা প্যালেস বা পর্তুগালের পেনা প্যালেস এখনো আছে সেই কালের সাক্ষী হয়ে।

মুরস শাসনকাল শেষে পর্তুগাল, স্পেনের বেশির ভাগ মসজিদই পরবর্তী সময়ে চার্চে রূপ নেয়। প্রায় তিন হাজারের বেশি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ চার্চে রূপ নেয়। পর্তুগিজ জাতীয় জীবনে মুসলিম শাসন অধ্যায়কে নেতিবাচক হিসেবে নিয়ে মসজিদকে চার্চে রূপান্তর, শিক্ষা কার্যক্রমে মুসলিম শাসন ইতিহাস নিয়ে তেমন আলোচনা না রাখাসহ নানা মুসলিম ঐতিহ্য মুছে ফেলার নিদর্শন রয়েছে এখানে। বরং মুরস শাসনকে এ দেশের একটা লজ্জাজনক অধ্যায় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

পর্তুগালের মেরিটোলা শহর, যেখানে এখনো প্রতিবছর মুসলিম ফেস্টিভাল ‘ফেস্টিভাল ইসলামিকো’ হয়ে থাকে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশদের শারীরিক গঠনে এখনো আরব ছাপ রয়ে গেছে। পর্তুগালের অনেক পুরনো কিছু এলাকার নাম অবশ্য এখনো মুসলিম নামকরণের ওপরই স্থায়িত্ব পেয়েছে, যেমন—আল-বুফেইরা, আল-ফামা। তাই সংরক্ষিত ইতিহাসগুলোর পাশাপাশি আবিষ্কৃত প্রাচীন স্থাপত্যগুলোকে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি যথাযথ সংরক্ষণের দাবি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদদের।