জাতীয়

পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ দেখে উচ্ছ্বসিত খুদে শিক্ষার্থীরা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

এক চোখ বন্ধ রেখে অন্যটি টেলিস্কোপে রাখতেই শিশু আনায়রার মুখে ফুটে উঠলো হাসি। শতাব্দীর দীর্ঘতম পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ দেখে উচ্ছ্বসিত এই খুদে শিক্ষার্থী। তার ভাষ্য- ‘বিরল ইতিহাসের সাক্ষী হলাম’। শুধু আনায়রা নয়- গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ দেখে উচ্ছ্বসিত নগরীর চিটাগং গ্রামার স্কুলের (সিজিএস) অন্য শিক্ষার্থীরাও।

পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ ছাড়াও এদিন আট ইঞ্চি রিফ্লেক্টিং টেলিস্কোপ দিয়ে ১৫২ কোটি মাইল দূরের গ্রহ শনি, ৭৪ কোটি মাইল দূরের গ্রহ বৃহস্পতি এবং ৭ কোটি ৬৬ লাখ মাইল দূরের গ্রহ শুক্র দেখার সুযোগ পায় সিজিএস শিক্ষার্থীরা। সিজিএস (ন্যাশনাল কারিক্যুলাম) একাডেমিক ভবনের ছাদে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।  প্রদর্শনীর বিষয়ে জাদুঘরের কিউরেটর সুকল্যান বাছাড় জানান, জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ৫৮০ বছর পর এদিন শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ হলো। বাংলাদেশ থেকে মূল চন্দ্রগ্রহণ দেখা না গেলেও পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা যাতে বিরল এই দৃশ্যটি নিজেরাই দেখতে পারে তার জন্য এই আয়োজন।

তিনি বলেন, মূল চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয় বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ১৯ মিনিটে। চলে ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। এরপর পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। গ্রহণের এ পর্যায়ে পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় না থেকে উপচ্ছায়ায় থাকে চাঁদ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৫টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। আমরা শিক্ষার্থীদের টেলিস্কোপ দিয়ে পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণের এই দৃশ্য দেখিয়েছি।

‘শুধু পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ নয়, টেলিস্কোপের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের আমরা শত কোটি মাইল দূরের গ্রহ শনি দেখিয়েছি। বৃহস্পতি এবং শুক্র গ্রহ দেখিয়েছি। তারা দেখিয়েছি। শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের এসব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের মনে আসা প্রশ্ন উপস্থাপন করেছে। আমরা উত্তর দিয়েছি’। যোগ করেন কিউরেটর সুকল্যান বাছাড়।

চন্দ্র ও গ্রহের দৃশ্য দেখতে শুক্রবার বিকাল থেকেই চকবাজারের সিজিএস একাডেমিক ভবনের ছাদে ভিড় করতে শুরু করে স্কুলের কেজি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পিনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ দেখার পাশাপাশি হেমন্তের হিম হাওয়া গায়ে জড়িয়ে দূরের গ্রহ শনি, কাছের গ্রহ শুক্র এবং বৃহস্পতি গ্রহ দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা। ধন্যবাদ জানায় আয়োজকদের।

তাদের একজন সিজিএস’র সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুহায়রা আহমেদ চৌধুরী। খুদে এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য- বইয়ের পাতায় ছবিতে দেখা চন্দ্র এবং গ্রহ নিজের চোখে দেখার ভিষণ ইচ্ছে ছিলো। সে ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে দারুণ ভালো লাগছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আশা করি এ ধরনের সুযোগ তারা আরও তৈরি করে দেবে।

সিজিএস’র (ন্যাশনাল কারিক্যুলাম) প্রধান শিক্ষক তাওসীন খান বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে এই আয়োজন। এখানে আমরা শিক্ষার্থীদের চন্দ্র এবং গ্রহ দেখানোর পাশাপাশি এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছি।

এ ধরনের প্রদর্শনী খুদে শিক্ষার্থীদের আরও বিজ্ঞানমনষ্ক করে গড়ে তুলবে এমনটাই আশা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের জ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের বিজ্ঞানের মধ্যেই সীমিত। তাদের বাস্তব বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা এই আয়োজন করেছি।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় চট্টগ্রাম বাস্তবভিত্তিক বিজ্ঞানচর্চা থেকে বঞ্চিত। এখানে টেলিস্কোপ সুবিধা খুবই সীমিত। বাচ্চারা বাস্তব বিজ্ঞান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এ জন্যই আমরা এ ধরনের আয়োজনে চট্টগ্রামের স্কুলকে বাছাই করেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত এক ডজন প্রোগ্রাম করবো চট্টগ্রামে। এসবের জন্য চট্টগ্রাম লোকেশনালি ফিজিবল।