জাতীয়

প্রক্টর বরাবর লেখা অবন্তিকার অভিযোগ ভাইরাল


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাদাফ অবন্তিকার লেখা প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সাদাফ অবন্তি প্রথম বর্ষে পড়াকালীন প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে আম্মান তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্যাম্পাস চত্বরে, ক্লাসে, করিডরে এবং বিভিন্ন স্থানে তিনি উত্ত্যক্ত করতেন।

গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আলী আক্কাস এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল বরাবর একটি অভিযোগ দেন।

অভিযোগপত্রে অবন্তী লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন আমার ব্যাচের আমারই বিভাগের আম্মান সিদ্দিকী আমার সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ ও উত্ত্যক্ত করে আসছে। প্রথম বর্ষে প্রেমের প্রস্তাব দিলে প্রত্যাখ্যান করলে সে ব্যক্তিগত জীবনে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাকে দেখে সে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করে এবং আমি এরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় বিপত্তি বাঁধে। সে অপমানিতবোধ করে এবং আমাকে বলে, আমার একদিন এমন অবস্থা করবে বা এমনভাবে ফাঁসাবে যাতে আমি মেয়ে হয়ে সমাজে মুখ দেখাতে না পারি এবং সুইসাইডে বাধ্য হই।’

অবন্তি আরও লেখেন, ‘এমন আগ্রাসী আচরণ মুখে গালাগাল রাস্তায় চলে গেলে দুর্ঘটনার হুমকিতে রূপ নেয়। তখন আমার বাবার অসুস্থ থাকায় আমি এ বিষয়ে গুরুত্ব দেইনি। পরে আমি তাকে স্পষ্ট করে বলে দেই আমার সাথে যেন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যোগাযোগ না রাখে।’ 

অভিযোগে অবন্তিকা আরও বলেন, ‘এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকে। হঠাৎ ছেলেটি মেসেঞ্জারে আমাকে বলে, সে এমন কিছু তথ্য ছড়াবে মানুষের কাছে যাতে আমি অপদস্থ হই এবং সে কবর থেকে একদম মুর্দা তুলে ফেলবে ওর সঙ্গে কিছু করলে! সম্প্রতি আমার বাবা মারা গেলে তার হুমকি–ধামকি এবং উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় আমি ডিপার্টমেন্টের করিডরে একা থাকলে সে আমাকে বিবিএ ফ্যাকাল্টির ছাদে কিংবা সম্পূর্ণ ফাঁকা ক্লাসরুমে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকে এবং সরাসরি কথা বললে আমি রেকর্ড করব এই ভয়ে সে (আম্মান) সেখান থেকে দ্রুত চলে যায়। কয়েক মাস আগে সে আমাকে আবারও ডেকে, আমাদের ডিপার্টমেন্টের ওপরের ফ্লোরে নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমি প্রতিবাদ করি এবং এবং সে আমাকে তখন ভয় দেখায় এই বলে যে, ‘আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে, দেখি কী করতে পারস। প্রক্টর স্যারকে একটা কল দিলেই স্যার ধরে, কারণ আমি সাংবাদিক। তুই জানোস, কোতোয়ালি থানাতেও আমার কেমন লিংক। এক সেকেন্ড লাগবে তোকে ফাঁসাতে। সেদিন আমি ভয়ে হোমটাউন চলে যায়। কিন্তু এরপর পরীক্ষা দিতে আবার আসতে হয়।’

অভিযোগে অবন্তি লিখেছেন, ‘যখনই আমার বন্ধু–বান্ধবেরা আমার থেকে চলে যেত, তখনই সে আমাকে সেদিন একা পেয়ে বিকেল ৩টা ২৬ মিনিটে আবার ফাঁকা ক্লাসরুমে ডাকে, তখন আমি ইগনোর করে যেতে চাইলে সে আমার পথ আটকায় এবং তার ডাকে ক্লাসরুমে না যাওয়ায় ধমক দেয়। আমি ঠিক তখনই তাকে বিভাগের অফিস রুমে নিয়ে যাই যাতে আমার কোনো ক্ষতি না হয়। আমি প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত, এমনকি পরিবার ছাড়া ঢাকায় থাকায় রাস্তাঘাটে চলাচলেও অনিরাপদবোধ করি!’ 

গত বছরের এসব অভিযোগ সম্পর্কে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এ বিষয়ে জানিতে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অবন্তী যখন প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দেয়। তখন আমি তাকে বলছি অফিসে এসে সরাসরি কথা বলতে। তাদের এই ঘটনা নিয়ে অতীতে তদন্ত কমিটিও ছিল। আবার ওই সময় আবার ভিসি স্যার মারা যাওয়ার ঘটনায় আর এসব বিষয়ে শুনতে পারিনি। ও আর অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেনি।’

এ বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার বলেন, এ বিষয়টাতে প্রথম থেকে এই মেয়েটার সাথে যা হয়েছে সে কখনোই বিভাগ কে জানাইনি। সব অভিযোগ ছিল প্রক্টর অফিস কেন্দ্রিক। শুধু প্রথমে এই ছেলেদের সাথে ঝামেলা কে কেন্দ্র করে তার মা-বাবাকে প্রক্টর অফিস ডেকেছে তখন জানি সে বিষয়টার সমাধানও হয়ে গেছে। এরপর গত নভেম্বরে হঠাৎ মেয়েটি আমাকে এসে বলে, স্যার আগের ঘটনা মীমাংসা হয়েছে, কিন্ত ওরা এখনো আমাকে এখনো ডিস্টার্ব করছে। আমি প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিব।, তখন আমি তার দরখাস্তে সুপারিশ করে দেই।

এদিকে অভিযোগে বিষয়ে রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ফেসবুকে লিখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবন্তীর সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেকটেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এর আগে ফেসবুকে ‘এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।’ স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই শিক্ষার্থী। ওই ফেসবুক পোস্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করা হয়।