জাতীয়

বিএনপির বৃহত্তর ঐক্যের নতুন ফর্মুলা ‘জাতীয় সরকার’


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বিএনপি জাতীয় সরকারের নতুন ধারণা নিয়ে হাজির হচ্ছে। দলের নেতৃত্বাধীন জোট ও মিত্র দলগুলোর শরিকদের চাপের মুখে ও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপিসহ মিত্রজোট যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন হবে। নির্বাচনে মিত্রদলগুলো জিতলেও সরকারে থাকবে, হারলেও থাকবে। অর্থাৎ নির্বাচনে যদি দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দলের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা হেরেও যান, তবু তাঁদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বিএনপি জাতীয় সরকারের নতুন ধারণা নিয়ে হাজির হচ্ছে। দলের নেতৃত্বাধীন জোট ও মিত্র দলগুলোর শরিকদের চাপের মুখে ও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপিসহ মিত্রজোট যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন হবে। নির্বাচনে মিত্রদলগুলো জিতলেও সরকারে থাকবে, হারলেও থাকবে। অর্থাৎ নির্বাচনে যদি দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দলের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা হেরেও যান, তবু তাঁদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানায়, জাতীয় সরকারের নতুন ধারণা সামনে রেখে শিগগির সরকারবিরোধী সব দল-মতকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাইছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, গত ১০ বছরে দেশের সমাজ ও মূল্যবোধের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। সরকারি হস্তক্ষেপে দেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সমাজ, আইনশৃঙ্খলা, সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই চলবে না; এসবের বড় আঙ্গিকে মেরামত করতে হবে। এর জন্য সব দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা জরুরি। সবাই মিলে ঠিক করতে হবে কোথায় কোথায় এর মেরামত বা সংস্কার করতে হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, অতীতের মতো তিন মাসের মধ্যেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এরশাদ সরকারের পতনের পরও নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। পরে অন্যান্য নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হলে আওয়ামী লীগ এতে লাভবান হবে। সরকারে তাদের অংশগ্রহণ থাকলে প্রশাসন নির্দলীয় করা কঠিন হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা সহজ হবে না। দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার হলে গণতন্ত্র ব্যাহত হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় সরকারের নতুন ধারণা উপস্থাপন করেন। এর পরপরই দলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ধারণার প্রচারণা শুরু করেন। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রধান বক্তা এবং কেন্দ্রীয় নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনে জিতলে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। দেশে অনেক ছোট দল, যাদের অনেক যোগ্য নেতা আছেন, তাঁরা নির্বাচনে না জিতলেও আমরা তাঁদের জাতীয় সরকারে নেব। আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করব।

বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় সরকার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন নেতারা। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে শরিক দলের নেতারা তাদের যুক্তিতে এখনও অনড় রয়েছে। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। নেতারা আশা করছেন, বিএনপির যুক্তির সঙ্গে তারাও একমত হবেন।

সম্প্রতি আগামী নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকারবিরোধী জোটে স্পষ্ট দুটি মত দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে এক মঞ্চে আন্দোলন করলেও এখন ভিন্নমত প্রকাশ করছে জোটের শরিকরা। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক জেএসডি এবং ২০ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক এলডিপি বলছে, জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত। মাত্র তিন মাসে নির্দলীয় ব্যক্তিদের পক্ষে দলীয়করণে দুষ্ট রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে মেরামত করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে না।

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও দল দুটির সঙ্গে একই সুরে কথা বলছেন। আবার ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক নাগরিক ঐক্য জাতীয় সরকার এবং নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আপত্তি তুলছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। দলীয় সরকারের পক্ষে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সমমনা দলগুলোর মধ্যে হঠাৎ কেন মতান্তর- এমন প্রশ্নের জবাবে নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লহ চৌধুরীর মত হচ্ছে, জাতীয় বা সর্বদলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বচন। এতে আওয়ামী লীগ ভয় পাবে না। কেউ কারও পক্ষ নিয়ে ভোট চুরি করতে পারবে না। বিগত প্রায় ১৫ বছর সারাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। দেশ তিন মাস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গেলেও যেভাবে প্রশাসন আওয়ামী লীগ ক্যাডার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।

নির্দলীয় সরকারের দাবির অবস্থান থেকে জাতীয় সরকারের দাবিতে স্থানান্তর হওয়ার বিষয়ে নানা যুক্তি দিচ্ছে দলগুলো। নেতারা মনে করেন, বর্তমানে রাষ্ট্রের যে দুরবস্থা, তাতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে তা সমাধান করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে। দলীয়করণের কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। দেশের শাসনতন্ত্রে সংস্কার আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ করতে হবে।

জাতীয় সরকারের পক্ষে এরই মধ্যে সমমনা গণফোরাম (মন্টু), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার, গণঅধিকার পরিষদ প্রভৃতি দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে। জাতীয় সরকারের উদ্যোগকে সমর্থনকারী একজন নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় না থাকায় তারা সমমনা দলগুলোকে নিয়ে একই ইস্যুতে মাঠে নামছেন। বিএনপির সঙ্গেও আলোচনা চলছে।