Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা মো. নিয়াজ আহমেদ চৌধুরী। গেল মাসে ৬২ বছর বয়সী এ ব্যক্তি বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন নগরীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন তিনি ‘এওর্টিক এনিউরিজম’ নামে বিরল রোগে আক্রান্ত। যাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ। সার্জারির ঝুঁকি আরও বেশি। তবে কোন ধরনের কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই ঝুঁকি নিয়েই সফল সার্জারি সম্পন্ন করেছিলেন চট্টগ্রামেরই হৃদরোগের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বলাই বাহুল্য এমন সার্জারি চট্টগ্রামে এটাই ছিল প্রথম।
শুধু বিরল ও জটিল এ সার্জারিই নয়। হৃদরোগের চিকিৎসকদের ভাষায়, গত দুই দশকে চট্টগ্রামেই হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবায় পৌঁছেছে। তাদের দাবি, চট্টগ্রামেই এখন পাওয়া যাচ্ছে হৃদরোগের ৯৫ শতাংশেরও বেশি চিকিৎসা। বছর তিনেক আগেও এই সেবার পরিধি এতোটা ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা বেড়েছে অন্তত দ্বিগুণ। এক কথায় এখন চট্টগ্রামেই মিলছে হৃদরোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা।
তথ্য অনুসারে, সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়মিত এনজিওগ্রাম, এনজিও প্লাস্টি ছাড়াও ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল অপারেশন হয়ে আসছে। যাতে এখন পর্যন্ত প্রায় শতভাগ সফলতাও পেয়েছেন চিকিৎসকরা। রাজধানী ঢাকার বাইরে সরকারিভাবে কেবলমাত্র এ হাসপাতালেই কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ চালু রয়েছে। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবেও চট্টগ্রামে ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও ইমপেরিয়াল হাসপাতাল। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি নিয়মিতই করছেন আলোচ্য হাসপাতালগুলোসহ আরও পাঁচটি হাসপাতাল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুধুমাত্র হার্ট প্রতিস্থাপন ছাড়া ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হৃদরোগের চিকিৎসাই সফলভাবেই এখন চট্টগ্রামে হচ্ছে। সরকারিভাবে চমেক হাসপাতালে এ চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব। যদিও অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বেসরকারিভাবেও বর্তমানে অনেক এগিয়েছে। সরকারি পাশপাশি এনজিওগ্রাম ও এনিজওপ্লাস্টি করার মতো পাঁচটি ক্যাথল্যাব রয়েছে। এক কথায় ধীরে ধীরে চট্টগ্রামে হৃদরোগের সেবার পরিধি বাড়ছে।’
হার্ট সার্জারিতে সফল চট্টগ্রাম
দেশের প্রথম সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে প্রথম কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ শুরু হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই। সীমাবদ্ধতার মধ্যেই যেখানে শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সফলতার সঙ্গেই প্রায় পাঁচ শতাধিক ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়। তবে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে এ সংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্য হতে পারে এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
চমেক হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামেই প্রথম সার্জারি শুরু করা হয়েছিল। যদিও সুযোগ সুবিধায় ঢাকা থেকে পেছনেই রয়েছে। তবে এটিও বাস্তব সত্য যে, ঢাকায় যে ধরনের অপারেশনগুলো হয়ে থাকে, নিয়মিত না হলেও তা চট্টগ্রামেও হচ্ছে। জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটসহ নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সাফল্য মিলছেই। তবে এটা নিশ্চিত দিয়ে বলা যায়, সংকট দূর হলে চট্টগ্রামও হৃদরোগ চিকিৎসায় মডেল হতে পারে।’
শুধু চট্টগ্রাম মেডিলেক কলেজ হাসপাতালেই নয়, বেসরকারিভাবে দীর্ঘদিন ধরে ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল অপারেশন করে যাচ্ছে মেট্রোপলিটন হাসপাতাল। হাসপাতালটির পৃথক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগও সহস্রধিক ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে সাফল্যের হার ৯৯ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের শুরুতে ইমপেরিয়াল হাসপাতালও চালু করেছে ওপেন হার্ট সার্জারি। ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতেও অর্ধশতাধিক ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হার্ট এন্ড ভাসকুলার সেন্টারের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সারওয়ার কামাল বলেন, ‘হার্ট সার্জারিতে সর্বাধুনিক পদ্ধতি হলো বিটিং হার্ট পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারি ও এমআইসিএস বা হার্টের বাইপাস এবং কসমেটিক ওপেন হার্ট সার্জারি। এমন জটিল অপারেশনগুলোই এখন প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামে হচ্ছে।
ভুল ধারণা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন রোগীরা
দেশের উল্লেখযোগ্য হৃদরোগী প্রতি বছরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। যদিও রোগীদের ধারণা দেশে হৃদরোগের সেবা যথেষ্ট নয়। তবে হৃদরোগের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা বলছেন, সম্পূর্ণ ভুল ধারণা নিয়েই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন রোগীরা। এতে করে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।
কার্ডিয়াক সার্জন ডা. নাজমুল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, দেশের চেয়ে বিদেশে চিকিৎসা অনেক উন্নত। তবে এটা নিশ্চিত দিয়ে বলতে পারি, হার্টের চিকিৎসার জন্য শতকরা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। শুধুমাত্র হার্টের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি দেয়া মানেই বিলাসিতা বা অপ্রয়োজনীয়তা ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া আসা যাওয়া চিকিৎসা খরচ দেশের চেয়েও তিন-চারগুণ বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রোগীরা ফলোআপে আসা যাওয়াতেই মৃত্যু হচ্ছে।’
একইমত প্রকাশ করে একই হাসপাতালের হৃদরোগ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘হৃদরোগের চিকিৎসায় দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও প্রচার প্রচারণা কম হওয়ায় রোগীরা বিদেশে যাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, বিদেশে চিকিৎসরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, একই সেবা দিচ্ছেন দেশের চিকিৎসকেরাও। কিন্তু মানুষের মধ্যে আস্থা না এলে এই অবস্থার পাল্টানো যাবে না।