নগরীর দামপাড়ার বাসিন্দা লাবিবা জাহান। সপ্তাহখানেক আগে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে থাকে এ শিশুর। সঙ্গে মাথা ব্যথা ও কাশিও। শুরুতে জ্বরের তীব্রতা কম থাকলেও হঠাতই তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছায়। কোভিডের এ সময়ে জ¦র, মাথা ব্যথা আর কাশিতে দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পরিবারের। যদিও শরণাপন্ন হলে স্বস্তির খবর দেন চিকিৎসক। জানান লাবিবা ‘ভাইরাল ফিভারে’ বা ভাইরাস জ¦রে আক্রান্ত। মূলত এটি আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
শুধু লাবিবা জাহান নয়, হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গেল দুই সপ্তাহ ধরেই শিশু রোগীদের ভিড় বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানান, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা এসব শিশু রোগীর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুই ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত। এছাড়া বেশিরভাগ শিশুই খাবারের অরুচির সমস্যা নিয়েও আসছেন চিকিৎসকের দ্বারে। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এতে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু সাবধানতা আর সচেতনতা থাকলেই ভাইরাল জ¦র থেকে বাঁচা সম্ভব। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুদের ঠা-াজনিত বিভিন্ন রোগ। যার কারণে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে নবজাতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের।
এছাড়া ব্যক্তিগত চেম্বারেও ভিড় বেড়েছে শিশুদের। যাদের বেশিরভাগ শিশুই জ্বর, সর্দি আর খাবারের অরুচির সমস্যা নিয়েই ভুগছেন। তবে কিছু কিছু শিশু ঠা-জনিত সমস্যা নিয়েও হাসপাতাল এবং চেম্বারগুলোতে যাচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। যদিও আতঙ্কিত না হয়ে এসময় শিশুদের প্রতি একটু বাড়তি নজর রাখার তাগিদ শিশু বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, ভাইরাল ফিভার নিয়েই বেশিরভাগ শিশুরা দ্বারস্থ হচ্ছে। যার সঙ্গে প্রায় ৯৯ শতাংশ মা বাবাই বলছেন, তাদের শিশুর খাবারে অরুচি। তবুও পরামর্শ দিচ্ছি শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ এবং ৬ মাস পর বুকের দুধের সঙ্গে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। সেটি এক সঙ্গে বেশি নয়, বরং অল্প অল্প করে বার বার খাওয়াতে হবে।
অনেক বাবা-মা চান দ্রুত সময়ের মধ্যে শিশুর জ¦র কমিয়ে আনতে। কিন্তু এটি শিশুর জন্য পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে উল্লেখ করে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সামান্য জ¦র হলেও অনেকেই নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়েটিক নিয়ে শিশুকে খাওয়াচ্ছে। এটি মোটেও উচিত নয়। ভাইরাল ফিভার কিছুদিন থাকে, এতে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এটি তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে জ¦রের সঙ্গে খিঁচুনি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. নাছির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিশুদের খাওয়া দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে বুকের দুধেরর পাশাপাশি সবসময় তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। প্রচুর ফলমূল খাওয়ার সঙ্গে বিশুদ্ধ পানিও বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের প্রতি অবশ্যই মায়েদের বাড়তি নজর দিতে হবে।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক আইসিইউ) শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নবজাতকদের বেশি ঝুঁকি থাকে। সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তন ও শীতকালেই শিশুদের সর্দি, কাশিসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশি দেখা যায় এবং ভাইরাসঘটিত রোগে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই শিশুর যত্নে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।