শিক্ষা

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের মহামারিতে আক্রান্ত বেরোবি!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

করোনাভাইরাসের মহামারিতেও থেমে নেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। মহামারির মধ্যে বন্ধ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি গঠন, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের হয়রানিসহ একের পর এক অনিয়মের জন্ম দিয়ে চলেছেন তিনি। করোনাকালে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা আরো বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে ভিসির সাথে ফটোসেশন না করায় একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের যোগ্য শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ না দিয়ে বিভাগটির অপর শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিসি কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে। ভিসির সাথে ওই শিক্ষকের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

অডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, ভিসি কলিমউল্লাহ একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক উমর ফারুককে ফোন দিয়ে ঢাকায় তার সাথে ফটোসেশন করে নিয়োগ পত্র নেয়ার কথা বলেন। ঢাকায় গিয়ে নিয়োগ পত্র নেয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ওই শিক্ষক। এর পরপরই উমর ফারুককে বাদ দিয়ে একই বিভাগের শিক্ষক আমির শরিফকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেন ভিসি। ঢাকায় গিয়ে ফটোসেশন না করার জন্য উমর ফারুককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা হলো বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্লানিং কমিটিতে জ্যোষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে বিভাগের প্লানিং কমিটিতে বিভাগটির শিক্ষক মোরশেদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম নীরব ও বিভাগীয় প্রধানের পদাধিকার বলে জনি পারভীন থাকার কথা থাকলেও সেখানে ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব জাহাঙ্গীর আলম নীরবকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় সম্পূর্ন স্বেচ্চাচারিতার মাধ্যমে ভিসি নিজেকে রেখে কমিটি গঠন করেছেন। এর প্রতিবাদে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন সেই প্লানিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি বলেন, কমিটিতে অনিয়ম করে বিভাগের বাহিরে অনুষদের ডিনকে (ভিসি) সদস্য হিসেবে মনোয়ন দেয়া হয়েছে যেটি সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্লানিং কমিটিতে অবৈধভাবে একাই দুই সদস্যের পদ নিয়ে প্লানিং কমিটির অন্য সদস্যের স্বাক্ষর ছাড়াই নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভিসির বিরুদ্ধে। বিভাগটির শিক্ষকদের অভিযোগ, প্লানিং কমিটির কোন রকম সভা ছাড়াই ভিসি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি প্লানিং কমিটির অন্য সদস্যের অগোচরেই এই নিয়োগ হয়েছে। শুধু তাই নয় বিভাগের যোগ্য শিক্ষক থাকার পরেও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও নিয়ে রেখেছেন ভিসি। মাসের পর মাস ভিসি ক্যাম্পাসে না থাকায় এক প্রকার গায়েবী ভাবেই চলছে বিভাগটি, বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর নিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৬ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন নিয়োগ করার সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরও বিজনেস স্টাটিজ অনুষদের ডিন হিসেবে প্রেষণে ট্রেজারার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হাসিবুর রহমানকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিসির বিরুদ্ধে। এ নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সামরিক শাসকদের মতো ফরমান জারি বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের।

এছাড়া মহামারিতে বন্ধ ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকজ, সাময়িক বরখাস্ত, প্রমোশন/আপগ্রেডেশন, এনওসি না দেয়া সহ ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছেন তিনি। হাইকোর্ট তাদের চাকরিতে বহাল করতে নির্দেশ দিলেও আদালতের রায়কে তোয়াক্কা করছেন না ভিসি। করোনা মহামারিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে যেসকল শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান হওয়ার কথা তাদের অনেকেই ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাদের বিভাগীয় প্রধান পদ দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। শুধু তাই নয়, ভিসির আমলে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী খোরশেদ আলম শিক্ষার্থীদের পতিতা, হকার ও কুলাঙ্গার বলার পরেও ভিসি নিরবে তাকে সমর্থন করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করার জন্য জন্য ভিসি একক পরিচালনায় লিখিত পরীক্ষা চালু করেছেন। বাছাই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে সকল বিভাগের নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় একাই প্রশ্ন করেন, একাই উত্তর পত্র মূল্যায়ন করেন। বাছাই বোর্ডের সদস্যদের নামমাত্র কন্ট্রিবিউশানে ভিসির দেয়া লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। শোনা যায় এই বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় ভিসির ঘনিষ্ঠ অনেক জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। উপাচার্যের এ অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ বন্ধে ইউজিসি’র হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, ভিসি কলিমউল্লাহ ১১শ’ দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকে ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসে বসে নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। তিনি ১/১১ এর প্রেতাত্মাদের অন্যতম একজন হয়েও সেটার নথিপত্র গায়েব করে ভিসি হয়ে তিনি আইন লঙ্ঘন করে এসব কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।

অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, যেহুতু ভিসির মেয়াদ আর কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। সে সাথে উনি (ভিসি) আগে যে অনিয়মগুলো করছিলেন, সেসব কর্মকান্ড আরো বেপরোয়াভাবে শুরু করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ভিসি মহোদয় ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আইন-রীতি কোন কিছুই তিনি অনুসরণ করছেন না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রোভিসি সরিফা সালোয়া ডিনা ও ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের সাড়া মেলেনি।