চট্টগ্রাম

শীতকালীন সবজি : ৬ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৭৮%


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ-দোহাজারী, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই উপজেলায় সবজি উৎপাদন রীতিমতো চমকে দিয়েছে। পটিয়া, রাঙ্গুনীয়া, হাটহাজারীসহ আরও কয়েকটি উপজেলায়ও শীতকালীন সবজি উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষে বেশি ঝুঁকছেন চাষীরা।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে সবজি উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৮ মে. টন। চলতি মৌসুমে (২০-২১ সাল) হয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মে. টন। অর্থাৎ ৬ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সবজির দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। এতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন বছর প্রতি বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ধানে খরচ বেশি পড়ছে। তাই ধানের চেয়ে সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা।’

নগরীর ২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ৫-৬ বছর আগেও চট্টগ্রামে সবজির চাহিদার বেশির ভাগই মেটানো হত উত্তর বঙ্গ থেকে সরবরাহ করা সবজি দিয়ে। সেই অবস্থা এখন পাল্টে গেছে। এখনকার উৎপাদিত সবজি দিয়ে চট্টগ্রামের সবজির চাহিদা ৯০ শতাংশ পূরণ করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগে তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে শীতকালীন সবজি আবাদ ছিল ১৭ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৮ মে. টন। বর্তমানে আবাদ হচ্ছে ৩০ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি জমিতে। উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৪ টনে। ৬ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে দুই লাখ ৮৫ হাজার ৩৬ টন। উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারে সবজি উৎপাদন বাড়ছে। ধানের চেয়ে সবজি চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা এখন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।

জেলার চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড উপজেলাকে সবজি ভান্ডার বলা হয়। এই দুই উপজেলায় প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। এছাড়াও বাঁশখালী, পটিয়া, মিরসরাই, রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলা ছাড়াও নগরীর বৃহত্তর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে সবজি চাষ করা হয়। এসব অঞ্চলে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের বড় চাহিদা পূরণ করছে।   কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামে অনেক পতিত জমি রয়েছে। চাষাবাদ বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে। প্রণোদনার মাধ্যমে নতুন নতুন সবজি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।’   কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ধানের চেয়ে সবজিতে ভালো মূল্য পাওয়ায় সবজি চাষ বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষি বিভাগে সাপোর্ট পেয়ে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন বেড়েই চলেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১০-১১ সালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল পৌনে তিন লাখ টন। পরের বছর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে। ১৪-১৫ মৌসুমে উৎপাদন দাঁড়ায় তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৮ টন। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সবজি উৎপাদন থর থর করে বেড়েই চলছে।

চন্দনাইশের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ১০ শতক জমিতে ফুল-বাঁধাকপি, ১০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। ৫ বছর আগে জমির পরিমাণ অর্ধেক ছিল। উৎপাদন ও লাভ ভালো হওয়ায় বছর প্রতি জমির পরিমাণও বাড়িয়েছে। চন্দনাইশের এখলাছ উদ্দিন বলেন, ৬৫ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছি। প্রতি হাটে দু-এক বছর লাখ টাকার বেশি সবজি বিক্রি করি। চলতি মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম ভালো পেয়েছি।

চাষীরা জানান, শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটো, বেগুনের জন্য এখন আর শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। এখন গ্রীষ্মকালেও শীতের সবজির আবাদ করা হয়। এক মৌসুমে দুই-তিন বার ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে ধানের চেয়ে সবজিতে লাভ ভালো হয়। তাদের অভিমত, ধান চাষে খরচ বেশি। লোকসান গুনতে হয়। সবজিতে সেই শঙ্কা থাকে না। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা কয়েক বছর ধরে সবজি চাষে মনোযোগী বেশি হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, পতিত জমি কমিয়ে আনা হচ্ছে। লাভ ভালো হওয়ায় সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কৃষক। সরকারও উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর প্রায় ১০ হাজার কৃষককে সবজি সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

কৃষক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষক পর্যায় থেকে কয়েক হাত ঘুরে এসব সবজি বাজারে আসে। এতে বড় লাভ লুটে নিচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। কৃষক পর্যায়ে সরাসরি সবজি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন। কৃষি বিভাগ বা সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রামে সবজি উৎপাদন আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি